বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ-২০২৫-এ কী কী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বাণিজ্যিক আদালতের এই অধ্যাদেশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা অন্যতম। উত্তরণ-পরবর্তী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য এখন কেবল শুল্ক সুবিধার উপর নির্ভর করবে না; বরং বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত, পূর্বানুমানযোগ্য ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করার সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।
এলডিসি সুবিধা হারানোর পর বাংলাদেশকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে আরও গভীর সম্পৃক্ততার ওপর নির্ভর করতে হবে। সেখানে চুক্তি বাস্তবায়ন ও বিনিয়োগকারীর আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। একটি কার্যকর বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতিকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবে। ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় ও সময় কমাবে, আইনের শাসন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা শক্তিশালী করবে এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সমমর্যাদার আলোচনায় অংশ নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মসৃণ উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুতকৃত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস)-এর আওতায় বাণিজ্যিক আদালত গঠন একটি আশু বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা, যার দায়িত্ব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
এক. বাণিজ্যিক বিরোধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসায়িক চুক্তি ব্যাখ্যা, বিমান–জাহাজ সম্পর্কিত লেনদেন ও চুক্তি, মেধাস্বত্ব, শেয়ারহোল্ডার, যৌথ উদ্যোগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও পার্টনারশিপ-সম্পর্কিত বিরোধ।
দুই. প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাণিজ্যিক আদালত গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, যেখানে বাণিজ্যিক আইন ও বাণিজ্যিক বিরোধ সম্পর্কে অভিজ্ঞ জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ পর্যায়ের বিচারক নিয়োগের বিধান আছে।
তিন. বাণিজ্যিক আদালতের বিচার ত্বরান্বিত করতে বেশ কিছু বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে—যেমন স্যুট ম্যানেজমেন্ট হিয়ারিং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মৌখিক সাক্ষ্য না নিয়ে দালিলিক সাক্ষ্য গ্রহণ।
চার. দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতা ও সংক্ষিপ্ত বিচারের (অর্থাৎ আরবিট্রেশন) বিধান রাখা হয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর খসড়ায় কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো—
এক. মামলার খরচ সম্পর্কিত বিধান—যেখানে ব্যর্থ পক্ষের কাছ থেকে সফল পক্ষের খরচ আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার আদালতকে প্রদান করা হয়েছে।
দুই. সুদ গণনার ক্ষেত্রে সালিশ আইনের আদলে একটি বিধান রাখা হয়েছে—যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ব্যাংক হারের সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদ নির্ধারণ করা যাবে।
তিন. বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এমইউ/কেএএ/