আন্তর্জাতিক

অন্ধকার-উত্তাল সাগর পেরিয়ে যেভাবে ভেনেজুয়েলা ছাড়েন মাচাদো

 

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দেশত্যাগের অভিযান ছিল অন্ধকার, ভয়াবহ ও স্যাতস্যাতে এক সমুদ্রযাত্রা, যেখানে কোনো আলো ছিল না, ছিল শুধু উত্তাল ঢেউ। মাচাদোকে ভেনেজুয়েলা থেকে বের করে আনার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্রায়ান স্টার্ন এভাবেই নাটকীয় সেই রাতের বর্ণনা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান স্টার্ন। তিনি একটি অলাভজনক উদ্ধার সংস্থার প্রধান। নরওয়েতে নোবেল শান্তি পুরস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর মাচাদো প্রকাশ্যে আসার কয়েক দিনের মধ্যে স্টার্ন অপারেশনটির বিবরণ তুলে ধরেন।

স্টার্ন বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ভয়ানক। তার ভাষায়, অন্ধকার ও উত্তাল সমুদ্রযাত্রা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তেমনি গোপন অভিযানের জন্য উপযুক্ত আড়ালও তৈরি করেছিল।

তিনি জানান, আগস্ট ২০২৪ থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নিপীড়নের আশঙ্কায় লুকিয়ে থাকা মাচাদো ভেনেজুয়েলা ছেড়ে যাওয়ার পর সাগরে তার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এরপর মাচাদো তার নৌকায় চড়ে ১৩-১৪ ঘণ্টার এক দীর্ঘ যাত্রা করে একটি গোপন স্থানে পৌঁছান, সেখান থেকে তিনি প্লেনে ওঠেন। পুরো মিশনের পরিকল্পনা হয়েছিল মাত্র চার দিন আগে।

স্টার্ন আরও বলেন, সমুদ্রের অবস্থা আমাদের জন্য আদর্শ ছিল, কিন্তু সাধারণভাবে এমন পানি কেউ চাইবে না... ঢেউ যত উঁচু হয়, রাডারের জন্য দেখাটা তত কঠিন হয়। তিনি বলেন, পুরোটা ঘটেছে গভীর রাতে। চাঁদের আলো ছিল খুব কম, ছিল মেঘের আচ্ছাদন আর আমাদের নৌকাগুলোতে কোনো আলো না থাকা খালি চোখে দেখা কঠিন ছিল।

‘আমরা সবাই ভিজে গিয়েছিলাম। আমার দল আর আমি সম্পূর্ণ ভিজে ছিলাম। তিনিও খুব ঠাণ্ডায় ছিলেন এবং ভিজেছিলেন। তার যাত্রা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।’

তবে সেই কঠোর যাত্রা শেষে মাচাদো ছিলেন ‘খুব খুশি, খুব উচ্ছ্বসিত এবং খুব ক্লান্ত,’ বলেন স্টার্ন। তিনি জানান, তার দলের প্রায় দুই ডজন লোক সরাসরি এ অভিযানে যুক্ত ছিলেন। আর এই অভিযান পুরোটাই চলেছে দাতাদের অর্থে, সরকারি অর্থ নয়।

স্টার্ন বলেন, পুরো অভিযানটি অর্থায়ন করেছে ‘কয়েকজন উদার দাতা’, যাদের কেউই মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা নন। মার্কিন সরকার এই অভিযানে এক পয়সাও দেয়নি, অন্তত আমার জানা মতে।

সিবিএস জানিয়েছে, মাচাদোর এক প্রতিনিধির বরাতে জানা গেছে, স্টার্নের সংস্থা গ্রে বুল রেসকিউ ফাউন্ডেশনই এ অপারেশনের দায়িত্বে ছিল, যার শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর)।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুকিয়ে থাকা কারাকাসের উপশহর থেকে বের হওয়ার সময় মাচাদো মাথায় উইগ পরে ছদ্মবেশ নেন।

তবে স্থলভাগের অভিযানের বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্টার্ন। কারণ ভবিষ্যতে তার সংস্থাটির ভেনেজুয়েলায় আরও কাজ থাকতে পারে।

তবে তিনি বলেছেন, তার দলটি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে আকাশ হামলার মতো ঝুঁকি এড়াতে অবস্থান ও পরিকল্পনা নিয়ে সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা’ করেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মাচাদো বলেন, দেশ ছাড়তে তার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল। তিনি অবশ্য ভেনেজুয়েলায় ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু কীভাবে ও কবে ফিরবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

স্টার্ন বলেন, তার দল ফেরানোর কাজে যুক্ত হবে না, কারণ তাদের কাজ হলো মানুষকে দেশ থেকে বের করা, দেশে ঢোকানো নয়। এটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমার মনে হয়, তার ফেরা উচিত নয়।

সূত্র: এএফপি

এসএএইচ