প্রবাস

মালয়েশিয়ার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন দক্ষ শ্রমিক

মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাত দ্রুত সম্প্রসারণের পথে রয়েছে। একের পর এক মেগা অবকাঠামো প্রকল্প ও আবাসন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক টেকসই ও জনসাধারণের সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। তবে এসব প্রকল্প সময়মতো ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে হলে দক্ষ ও পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে প্রায় ছয় লাখ বিদেশিকর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক, যারা স্থানীয় শ্রমবাজারে দক্ষ জনবলের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

কনস্ট্রাকশন লেবার এক্সচেঞ্জ সেন্টার (সিএলএবি)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাতুক আবদুল রফিক আবদুল রাজিস বলেন, বিদেশি শ্রমিকদের উপস্থিতি শুধু বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক নয় বরং স্থানীয় কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং নির্মাণ শিল্পে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

শুক্রবার, হরিয়ান মেট্রোকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্মাণ খাত এখন একটি রূপান্তরকাল অতিক্রম করছে। বিদেশি কর্মীদের আরও সুশৃঙ্খল ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবৈধ শ্রমিকের সমস্যা কমানো সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে এই খাতটি স্থানীয়দের কাছেও আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

তিনি আরও বলেন, যদি বিদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করে দক্ষভাবে পরিচালনা করা যায়, তবে উপযুক্ত প্রণোদনা দিয়ে স্থানীয় কর্মীদের কেন এই খাতে আকৃষ্ট করা যাবে না?

আবদুল রফিক জানান, মালয়েশিয়ার নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন বোর্ড (সিআইডিবি)-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিএলএবি গত ২০ বছর ধরে বিদেশি কর্মীদের বৈধ, নিরাপদ ও কার্যকরভাবে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। নির্মাণ প্রকল্প সাধারণত এক থেকে দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ায় অনেক কর্মী পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তর না পেয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান, যা পরবর্তীতে অবৈধ শ্রমিক বৃদ্ধির কারণ হয়।

তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধানেই সিএলএবি গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা শ্রমিক বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করি। প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ বিদেশি কর্মী নিজ দেশে ফিরে যান। তবে নতুন নিয়োগে স্থগিতাদেশ (মোরাটোরিয়াম) থাকায় সেই শূন্যতা পূরণ করা যাচ্ছে না।

তার মতে, বর্তমানে চলমান ও আসন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যমান ছয় লাখ বিদেশিকর্মী অপরিহার্য। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশের কাছে সিআইডিবি স্বীকৃত দক্ষতা সনদ রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে সিএলএবি বৈধ ও চাহিদাভিত্তিক বিদেশিকর্মী নিয়োগে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি কর্মী পারমিট, নিয়োগ চুক্তি এবং কল্যাণ তদারকির দায়িত্ব পালন করছে, যেন নিয়োগকর্তারা আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি ছাড়াই দক্ষ শ্রমিক পেতে পারেন এবং কর্মীরাও ন্যায্য অধিকার ও সুরক্ষা পান।

শ্রম ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে সিএলএবি চালু করেছে নির্মাণ কর্মী পরিচয়পত্র ‘গ্রিন কার্ড’, যা ‘ই-ওয়েজেস’ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত। এর মাধ্যমে বেতন পরিশোধে স্বচ্ছতা, কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে সাইটে প্রবেশ, দক্ষতার স্বীকৃতি ও উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ সহজ হয়েছে।

আবদুল রফিক বলেন, গ্রিন কার্ড ব্যবস্থার ফলে শ্রম ব্যবস্থাপনা আরও পেশাদার ও কার্যকর হচ্ছে। এটি শুধু বিদেশি শ্রমিকদের শোষণ থেকে রক্ষা করছে না বরং স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও তৈরি করছে।

এছাড়া সিএলএবির স্কিলড ওয়ার্কার কম্পিটেন্সি সার্টিফিকেট (এসকেকেপি) কর্মসূচির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উভয় শ্রমিকের দক্ষতা যাচাই ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এতে কাজের মান ও নিরাপত্তা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

আবদুল রফিকের মতে, বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় এই কাঠামোগত পরিবর্তন নির্মাণ খাতে স্থানীয় কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি করেছে। এখন নির্মাণ শিল্প একটি পেশাদার, সংগঠিত ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠছে-যেখানে সামাজিক সুরক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে, বলেন তিনি।

সব মিলিয়ে, সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত বিদেশি শ্রমশক্তি শুধু দেশের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক নয় বরং একটি স্বচ্ছ, দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্মাণ খাত গড়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সিএলএবি, গ্রিন কার্ড ও এসকেকেপির মতো উদ্যোগ ভবিষ্যতে স্থানীয় কর্মীদের জন্যও নির্মাণ খাতকে সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্রে পরিণত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমআরএম/এএসএম