ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এতে বলা হয়েছে, একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট সাদা হলেও গণনার সুবিধার্থে গণভোটের ব্যালটের রঙ হবে গোলাপী। এছাড়া গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য একই ব্যালট বক্স ফেলা হবে।
ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ পরিপত্রে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০২৬ এ অনুষ্ঠেয় গণভোট উপলক্ষে গণভোটের প্রশ্ন, অনুষ্ঠানের সময়, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নির্ধারণ, ফলাফল প্রকাশ, ফলাফল একত্রীকরণ এবং গেজেট প্রকাশ ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
গণভোট অনুষ্ঠানের সময়সূচি ও গণবিজ্ঞপ্তি:
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে এয়োদশ আত্মীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিন অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত একইসঙ্গে বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন যে সব রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে সে সব রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণ গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। একইভাবে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে যেসব প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ নিযুক্ত হবেন সেসব প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগন গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগণ একইসাথে একই সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
ভোটকেন্দ্র, ভোটার তালিকা ও ভোটার:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্র, গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা হবে গণভোটের ফোটার তালিকা এবং উক্ত তালিকাতে উল্লিখিত ভোটারগণ ঋণভোট প্রদানের অধিকমারী হবেন। অর্থাৎ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সহকারী রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট সরবরাহকৃত প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটদানের অধিকারী ভোটারগণের তথ্য সম্বলিত ভোটার তালিকা গণভোটের ভোটার তালিকা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ভিন্ন রঙয়ের ব্যালটে অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের ব্যালট গোলাপি রঙের হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন অনুমোদিত, নির্ধারিত এবং সরবরাহকৃত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সই গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসাবে ব্যবহৃত হবে। ভোটারগণ ভোট প্রদান শেষে জাতীয় সংসদের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালট একই বাক্সে ফেলবেন। ভোটগ্রহণ শুরুর আধা ঘণ্টা আগে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ব্যালট বক্স সিল করতে হবে। ভোটদান পদ্ধতি:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে একইসঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারের সঙ্গে গণভোটের একটি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে এবং গণভোটেয় ব্যালট পেপারে হ্যাঁ বা না- তে সিল দিয়ে ব্যালট পেপার ব্যালট পেপার ভাঁজ করে নির্ধারিত ব্যালট বাক্সে ফেলবেন।
ভোটদানের প্রক্রিয়া:
ভোটার ব্যালট পেপার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যালট পেপার চিহ্নিত করার জন্য নির্ধারিত গোপন কক্ষে যাবেন। যে প্রশ্নটিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সে প্রশ্নে হ্যাঁ-সূচক বা না-সূচক ভোটদান করতে চাইলে একজন ভোটায় ব্যালট পেপারে মুদ্রিত হ্যাঁ-সূচক ঘরে হ্যাঁ বা না-সূচক ঘরে না দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরবরাহকৃদ্ধ সিলমোহর দ্বারা নিজ ভোট প্রদান করবেন। ভোট প্রদানের পর ভোটার ব্যালট পেপারটি ভাঁজ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সাথে নির্ধারিত স্থানে রক্ষিত ব্যালট বাক্সে তা প্রবেশ করাবেন।
ভোটগ্রহণ সমাপ্তির পর:
ভোটগ্রহণ সমাপ্তির পর প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে/পোস্টাল ভোটের গণনা কেন্দ্রে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে নিয়োজিত এজেন্টদের উপস্থিতিতে (যদি থাকে) প্রত্যেকটি ব্যালট বাক্স খুলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ও গণভোটের ব্যালটসমূহ আলাদা করবেন। অতঃপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালটসমূহ প্রার্থী ভিত্তিক এবং গণভোটে ভোটদানকৃত হ্যাঁ-সূচক ও না-সূচক ব্যালট পেপারসমূহ পৃথক করে গণনা করবেন।
যে কারণে বাতিল গণভোটের ব্যালট পেপার:
হ্যাঁ-সূচক বা না-সূচক ঘরে ভোট দেয়া হয় নাই এবং প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর নাই এমন ব্যালট বাতিল হবে। ভোটার কোন ঘরে ভোট দিয়েছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে বোঝা না যায় সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।
ফলাফল প্রেরণ পদ্ধতি/মাধ্যম:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যারের মাধ্যমে একই পদ্ধতিতে গণভোটের ফলাফল প্রেরণ করতে হবে। গণভোটের ফলাফল রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (আরএমএস) মাধ্যমে প্রেরণের লক্ষ্যে আইসিটি অনুবিভাগ সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণ করবে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দায়িত্বরত অপারেটরগণকে আরএমএস বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
কতিপয় বিষয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য বিধি-বিধান অনুসরণ:
গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ, ভোট কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার, আইন অমান্যকারীগণের ভোট কেন্দ্র হতে বহিষ্কার, রাজনৈতিক দলের এজেন্ট সংক্রান্ত বিষয়াবলী, নির্বাচনি পর্যবেক্ষক কর্তৃক ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন প্রকার নির্বাচনি অপরাধ ইত্যাদি বিষয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য বিধি-বিধানসমূহ অনুসরণ করতে হবে।
ইসির পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ২৫ নভেম্বর জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এর উপর গণভোট অধ্যাদেশ জারি করিয়াছেন।
গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর ধারা ১১ অনুসারে, উক্ত অধ্যাদেশ এর ধারা ৩ অনুযায়ী জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এ বর্ণিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবের উপর জনগণের সম্মতি রহিয়াছে কি না তাহা যাচাইয়ের জন্য (হ্যাঁ/না-এর মাধ্যমে) গণভোট অধ্যাদেশ এর ধারা ৮ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, একই দিনে, পৃথক ব্যালট পেপারের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ধার্য করিতেছে।
প্রস্তাবগুলো:
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ পঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধন করিতে হইলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হইবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হইয়াছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকিবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে। গণভোট অনুষ্ঠানের সময় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে জাতীয় সংসদের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে গণভোটের জন্য পৃথক ব্যালট পেপারের মাধ্যমে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে গণভোটে ভোটপ্রদানের জন্য আহ্বান করিতেছে।
এমওএস/এনএইচআর