জাতীয়

শুধু ভোটার নয়, রাজনীতিবিদরাও এখন বিপদে আছেন: দেবপ্রিয়

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু ভোটাররা নন, শুধু বিপন্ন জনগোষ্ঠী নয়, রাজনীতিবিদরাও বিপন্নতার (বিপদে) মধ্যে আছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়।

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর গুলির কথা তুলে ধরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই আক্রমণ শেষ আক্রমণ- এটা কেউ মনে করছে না। সেহেতু নিরাপত্তার বিষয়টি আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত এক মাস ধরে আমরা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রাক নির্বাচনি আলোচনা করছি। ঢাকার বাইরে যে নাগরিক সমাজ আছে তারা নির্বাচন নিয়ে কী চিন্তা করেন, নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সরকার নিয়ে তাদের প্রত্যাশা কী জানতে চেয়েছি। তাদের অনেক প্রত্যাশা; সেগুলো নিয়ে নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করছি। কিন্তু একটি বিষয় সব জায়গায় খুব গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে- সেটি হলো নিরাপত্তার বিষয়। এর বহুমাত্রিক বিষয়টিও আমাদের কাছে এসেছে।

তিনি বলেন, দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন। সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে এসেছে। তার সঙ্গে বড় একটি বিষয় এসেছে, সেটি হচ্ছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা আক্রমণের শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাদের জন্য সেই সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না- এ ব্যাপারে খুব বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঝুঁকি-গান পয়েন্টে থাকা শীর্ষ জুলাই-যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেবে পুলিশ জুলাইয়ের পক্ষের লোকদের ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত দেড় মাসে বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে।

সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে। যার ফল হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যে শ্রম আইন হয়েছে এর চেয়ে ভালো আইন হওয়া সম্ভব ছিল না। আই এম আন্ডার দ্য ফায়ার অব এমপ্লয়ার। উনারা মনে করেন আমি টোটালি ওয়ার্কাদের পক্ষে চলে গেছি।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে। ৪৭টির মধ্যে ৪২টির সঙ্গে আইন কানুন জড়িত। সেই আইনের সাক্ষাৎ আমরা এখনো পাইনি। যেমন, একটা প্রস্তাব ছিল দুদকে চারজন মহাপরিচালক বাড়াতে হবে। তাদের ধারণা চারজন মানে ৪টা ব্যক্তি। অথচ চারজন মহাপরিচালক মানে যে ১২০ গুণ ৪, এটা তারা বিবেচনা করেননি। দুদকে তাদের জায়গা হবে কি না এটাও তারা চিন্তা করেননি। প্রস্তুাব করার আগে বাস্তবায়ন করার সুযোগ আছে কি না এটাও দেখতে হবে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দেওয়া শতাধিক প্রস্তাবের একটিও সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ করেন এই কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না।

কামাল আহমেদ বলেন, আমরা ১০০টির বেশি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর একটিও গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করেনি সরকার। গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা থাকলেও সরকারি দপ্তরগুলো থেকে তথ্য পেতে কমিশনকে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।

এসএম/কেএসআর