১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের স্মরণ করবে গোটা জাতি। তাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনটি উপলক্ষে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
যে যুদ্ধ পরাধীনতার শিকল ভেঙে, বিশ্বের মানচিত্রে স্থান দিয়েছে এক টুকরো ভূখণ্ড, মুক্ত আকাশে দখল নিয়েছে লাল-সবুজের পতাকা, সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনের প্রথম প্রহর থেকেই মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মোড়ানো ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। এরই মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে মুছে, ফুল আর রং তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করেছে গণপূর্ত বিভাগ। লাল-সবুজে সেজেছে সৌধ এলাকা।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। গণকবর ও শহীদ বেদী, পায়ে চলা পথসহ সৌধ এলাকা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। লেক সংস্কার ও আলোকসজ্জা কাজও হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল ফটক থেকে বেদী পর্যন্ত হাঁটা পথে রং-তুলির আঁচড়ে লাল ইটের মধ্যে সাদা রঙের ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে। চত্বরজুড়ে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, সাদাসহ বিভিন্ন রং ও বর্ণের ফুলের গাছ। এসব গাছে ফুটে আছে রঙিন ফুল।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন আনু জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে শতাধিক শ্রমিক জাতীয় স্মৃতিসৌধকে বিজয় দিবসের জন্য প্রস্তুত করছেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এদিকে শুধু সৌধ প্রাঙ্গণই নয়, বিজয় দিবসের রঙিন সাজে সেজেছে সাভারের জনপথ। দিনটি পালনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দল্লাহ আল আমিন জানান, জাতীয় অনুষ্ঠানমালা ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে রয়েছে নানা আয়োজন। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হবে সম্মাননা। শুধু তাই নয়, গোটা সাভার লাল-সবুজ বাতিতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
অন্যান্য বারের মতো এবারও সৌধ এলাকাসহ সড়ক-মহাসড়কে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসিটিভির পাশাপাশি মোতায়েন থাকছে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার থেকে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি পোশাকে এবং সাদা পোশাকে চার হাজারের বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জনগণের জানমাল রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
তিনি আরও জানান, জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের যা যা করণীয়, আমরা সব ব্যবস্থা করেছি। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৩টি সেক্টরের মাধ্যমে ৪ হাজার পুলিশের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে সাদা পোশাকের পাশাপাশি সিসিটিভির নজরদারি থাকছে।
দিনের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এ স্মৃতিরোমন্থন সৌধের প্রধান ফটক।
এফএ/জেআইএম