কালোই যেন সারার ভাষা। আলো-ছায়ার ভাঁজে ভাঁজে, নীরব অথচ দৃঢ় এই দুই বিপরীতের সমন্বয়েই ধরা দিয়েছে সারা অর্জুন। শিশুশিল্পী হিসেবে পরিচয়ের যে অধ্যায় একদিন তাকে ভারতের সবচেয়ে দামী মুখ বানিয়েছিল, বিশ বছরে পা দিয়ে সারা যেন সেই স্মৃতির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক অধ্যায় খুললেন ফ্যাশনের মাধ্যমে, শরীরী ভাষার মাধ্যমে আর আত্মবিশ্বাসের নিখুঁত নিয়ন্ত্রণে।
এই ছবির সাজ-পোশাকেই সেই রূপান্তরের সবচেয়ে স্পষ্ট ইশারা। কালো গাউনটি প্রথম দেখায় সরল মনে হলেও কাছ থেকে তাকালেই ধরা পড়ে এর নির্মাণভাষা। শিয়ার প্যানেলিং, টেক্সচারের স্তর, কাঁধে ভলিউম আর কোমরের দিকে নরম ভাঁজ। পোশাকটি শরীর ঢাকে না, আবার প্রকাশও করে না; বরং ইঙ্গিতে বলে। এই ‘ইঙ্গিতের নান্দনিকতা’ই সারাকে আলাদা করে।
গাউনের মাঝখানের স্বচ্ছ অংশটি সাহসী, কিন্তু ভঙ্গি নয়। এটি কেবল ত্বক দেখানোর আয়োজন নয়; এটি নিয়ন্ত্রণের প্রদর্শনী। কাঁধের কাঠামোগত ভলিউম মুখের দিকে দৃষ্টি টানে, আর নীচের দিকে নামা মসৃণ ভাঁজ চলনে যোগ করে নাটকীয়তা।
কালো রঙ এখানে শোকের নয়, ক্ষমতার। আলো পড়লে কাপড়ের টেক্সচার চকচক করে ওঠে, আবার ছায়ায় মিলিয়ে যায়; যেমন সারা নিজে, ক্যামেরার সামনে থাকলে দৃশ্যমান, নীরব থাকলে রহস্যময়।
স্টাইলিংও সচেতনভাবে সংযত। ভারী নেকলেস নেই, কানে ছোট, জ্যামিতিক ঝুমকা; হাতে মিনিমাল রিং। চুল আঁটসাঁট করে বাঁধা, কোনো উড়ন্ত অবহেলা নেই।
মেকআপে ন্যুড টোন, চোখে নরম শ্যাডো সব মিলিয়ে একটাই বার্তা: পোশাক নয়, ব্যক্তিত্বই আগে।
এই ব্যক্তিত্বের পেছনে আছে দীর্ঘ প্রস্তুতি। দেড় বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে আসা, পাঁচ পেরোতেই বিজ্ঞাপনের সেঞ্চুরি; সারা অর্জুনের বেড়ে ওঠা আসলে ফ্রেমের ভেতরেই। কৈশোরে দক্ষিণের বড় পর্দায় কাজ করতে করতেই তিনি শিখেছেন ‘অতিরিক্ত’ নয়, ‘যথাযথ’ কীভাবে হতে হয়। এই ছবির ফ্যাশন-ভাষাও সেই শিক্ষারই ফল নাটকীয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত।
এখন বলিউডের আলোয় তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে নতুনভাবে। ধুরন্ধর ছবিতে রণবীর সিং–এর বিপরীতে তার উপস্থিতি বয়সের হিসাবকে সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করেছে, ঠিকই। কিন্তু ফ্যাশন ফ্রেমে সারা সেই বিতর্কের জবাব দেন নিঃশব্দে। এখানে তিনি ‘কারও নায়িকা’ নন, তিনি নিজেই একটি বক্তব্য।
এই ছবিতে তার দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করার মতো। সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকানো নয়; খানিকটা পাশ ফিরিয়ে রাখা চোখ যেন বলছে, ‘আমি দেখছি, কিন্তু সবটা দেখাচ্ছি না। এই দৃষ্টিই তাকে শিশু শিল্পীর স্মৃতি থেকে টেনে এনে আধুনিক নায়িকার কাতারে বসায়।
ফ্যাশন সব সময় কাপড়ের গল্প নয়; এটি সময়ের গল্পও। সারার এই কালো গাউন সময়কে ধরেছে যেখানে নারী অভিনেত্রীরা সাহসী হচ্ছেন, কিন্তু সংজ্ঞা বদলে। সাহস মানে কেবল উন্মুক্ততা নয়; সাহস মানে নিজের শর্তে দৃশ্যমান হওয়া। সারার পোশাক সেই শর্তের ভাষা।
সব মিলিয়ে, এই ফটোশুটে সারা অর্জুন নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন। শিশুশিল্পীর অতীতকে অস্বীকার না করে, কিন্তু সেখানে আটকে না থেকে। কালো গাউনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে তার পরবর্তী যাত্রার ইশারা। আলো-ছায়ার খেলায় তিনি প্রমাণ করেন স্টাইল যখন সচেতন হয়, বয়স তখন কেবল একটি সংখ্যা।
জেএস/