জাতীয়

ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক ছিল না

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদের পূর্বে একবার জামিন হয়েছে- সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। এবার এ নিয়ে মুখ খুলেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদের জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া জামিন বিতর্ক শিরোনামে এক স্ট্যাটাসে আইন উপদেষ্টা লেখেন, আমাদের প্রিয় ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করেছে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। তাকে র‍্যাব গ্রেফতার করেছিল গত বছর। এরপর তার জামিন হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এরপর থেকে জামিন দেওয়ার ন্যয্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আবারো আলোচনা-বিতর্ক উঠছে।

ড. আসিফ নজরুল সেখানে আরও লেখেন, প্রথমেই বলে রাখি, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর কোনো দেশে থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। কাজেই সেখানে ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

তিনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ফয়সাল করিম মাসুদ গত বছর জামিন পেয়েছিল অস্ত্র মামলায়। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীরা অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।

হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে বিচারিক বিবেচনা কতটা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। এমন মন্তব্য করে তিনি লেখেন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কীভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম (২৩ অক্টোবর, ২০২৫) [কমেন্টে লিংক দেখুন]। এজন্য একশ্রেণির আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করা হয়েছিল (২৫ অক্টোবর ২০২৫) [কমেন্টে লিংক দেখুন]।

কমেন্টে ২৩ অক্টোবর তারিখে জাগো নিউজে ‘পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলার শুনানি কীভাবে সম্ভব, প্রশ্ন আইন উপদেষ্টার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ শেয়ার করেন।

এরপর তিনি লেখেন, জামিন পাওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে রয়েছে। কিন্তু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যে অপরাধীর সংযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অপরাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে বা অন্য কারো জীবন বিপন্ন করতে পারে, তাকে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। এ নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলেছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় ওনার কাছে উচ্চ আদালতে অস্বাভাবিক জামিন নিয়ে আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম। কিছু জামিন নিম্ন আদালত থেকেও হয়েছে গত ১৬ মাসে। আমরা সেসব মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামি কিভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়নি, এমনকি আসামির দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করেনি। এরপরও আমি যথাযথ বিচারিক বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে জামিন না দেওয়ার কথা বলেছি (১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫) [কমেন্টে লিংক দেখুন]। কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

শেষে আইন উপদেষ্টা লেখেন, জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদের বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দেবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাই বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দেবেন না।না হলে, পরকালেও এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

এএমএ