ক্যাম্পাস

আওয়ামীপন্থি ডিনদের সময় বাড়ানো নিয়ে রাকসু জিএসের আলটিমেটাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ১২ জন ডিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর)। তাদের মধ্যে আওয়ামীপন্থি ডিন রয়েছেন ছয়জন। তবে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ডিনদের সময় বাড়ানো নিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মার।

২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ হলুদ প্যানেল। জয়ী অনুষদগুলো হলো আইন, বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং ভূ-বিজ্ঞান।

হলুদ প্যানেল থেকে আইন অনুষদে আইন বিভাগের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদে গণিত বিভাগের ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম সেলিম রেজা নির্বাচিত ডিন।

আওয়ামীপন্থি ডিনদের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‌‘৫ আগস্টের ঘটনার পরপরই যদি সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সদিচ্ছা থাকতো, তাহলে প্রথম ও জরুরি পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল আওয়ামীপন্থি ডিনদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। কারণ ডিন পদটি কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি একদিকে একাডেমিক নীতিনির্ধারণে প্রভাবশালী, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর নৈতিক ও আদর্শিক প্রভাব বিস্তারকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান।’

এদিকে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুক পোস্টে হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ডিনদের অপসারণ করানো হয় নাই। নির্বাচিত বলে পুরো দেড় বছর স্টে করাইছে প্রশাসন। গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) ডিনদের মেয়াদ শেষ হইছে। শুনেছি এই ডিনদের আবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আলটিমেটাম আমি ফিল-আপ করে তারপর ছাড়ি, এটা প্রশাসন ভালোমতো জানে। আওয়ামীপন্থি ডিনরা আগামীকাল ডিন অফিসের চেয়ারে দেখলে***কেটে কাউয়া দিয়ে খাওয়াবো। আজ সময় দিলাম রিজাইন দেওয়ার জন্য সম্মানের সাথে। আগামীকাল অফিসে গিয়ে বাকিটা বুঝিয়ে দেবো। নমনীয়তা আমাদের জন্য কাল হয়ে গেছে। আগামীকাল আল্লাহর ওয়াস্তে কোনো শিক্ষার্থীকে যেন না দেখি এদের পক্ষ নিতে। তাদের পদত্যাগের সময় দিলাম এই কর্মদিবস। সাথে সাথে রাবিয়ানদের অনুরোধ জানাবো, আগামীকাল রাকসু ভবনের সামনে সকাল ১০টায় চলে আসবেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসঊদ বলেন, ‘গত এক বছর তাদেরকে পোষার একটা কারণ হচ্ছে তারা নির্বাচিত ডিন। তাছাড়া আমরা কিছুটা নিরুপায় হয়ে তাদেরকে রাখতে হচ্ছে। কারণ ১৭ তারিখ রাবিতে সমাবর্তন ছিল। একমাস পরে আবার ভর্তি পরীক্ষা। তাই এখন ডিন নির্বাচন দিলে সেটা ভর্তি পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদেরকে যেহেতু এক বছর পুষছি, আরও একমাস পুষতে হবে।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘রাবি ১৯৭৩ অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত একটা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তাদেরকে সরিয়ে শুধু ভিসি স্যারই দায়িত্ব পালন করার ইখতেয়ার রাখেন। এর আগে, করোনার সময়ে রাবিতে ডিনদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদেরকেই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনিতেই ভিসি স্যারের কাজের যে লোড, এতগুলো দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করলে তার ওপর সেটা অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাবে। তাই তাদেরকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট মিটিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে অংশ নিতে পারবেন না।’

মনির হোসেন মাহিন/এসআর/এএসএম