বিনোদন

ল্যাপটপ, ফোন ও হার্ডডিস্ক লুট, ছায়ানটের প্রতিক্রিয়া

ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট সংস্কৃতিভবনে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর এ ঘটনা ঘটে। আজ (১৯ ডিসেম্বর) শুক্রবার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় ছায়ানট জানিয়েছে ভবনটি থেকে বেশ কিছু ল্যাপটপ, ফোন ও হার্ডডিস্ক লুট হয়েছে।

সভাপতি সারওয়ার আলী ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা সাক্ষরিত ওই প্রতিক্রিয়ায় তারা জানান, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে ১৮ তারিখ রাত ১২টার পর একজোট লোক ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা ছয়তলা ভবনের সকল সিসি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ, প্রক্ষালণ কক্ষ এবং বহু বাদ্যযন্ত্র, মিলনায়তন, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। সার্ভারসহ ছায়ানটের কিছু বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে।

তারা জানান, ঘটনায় অন্তত ৭টি ল্যাপটপসহ গোটা চারেক ফোন ও কিছু হার্ডডিস্ক লুট হয়েছ। তাদের ভাঙচুরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে ছায়ানট কর্তৃপক্ষ।

ক্ষতিপূরণের প্রত্যাশা না করে তারা জানিয়েছে যে, ছায়ানট স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান তারা গ্রহণ করে না। বরং আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি তারা নিজেরাই পূরণ করবে। সংগীত এবং শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় এই সাময়িক বিঘ্নের দ্রুত প্রতিকারে তারা বদ্ধপরিকর।

লিখিত প্রতিক্রিয়ায় ছায়ানট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ছায়ানটের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়, সংগীতসংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বাঙালী জাতিসত্তাকে ধারণ করে ছায়ানট। ছায়ানট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে প্রয়াসী। আমরা ওসমান হাদির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত। কিন্তু ওই সূত্র ধরে ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো, তা মোটেই বোধগম্য নয়। হয়তো, পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতিচর্চা বিরোধীগোষ্ঠী।’

ছায়ানট উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে সমাদৃত। বাংলা গানের চর্চা বিস্তৃতির পশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে ছায়ানটের ভূমিকাও সারা বিশ্বে স্বীকৃত। তাই ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে এই নিন্দনীয় হামলা মাতৃভূমি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বিশ্বে। বিশ্বের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন। তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা জানিয়েছে, বাঙালির আবহমান সংগীতসংস্কৃতির সাধনা ও প্রসারে ছায়ানট তার স্থির প্রত্যয় যাত্রায় অবিচল থাকবে।

আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ক্ষতিগ্রস্থ ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ঘুরে দেখেন এবং ছায়ানটের সংগঠক পার্থ তানভীর নভেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। ছায়ানট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করে যাবতীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি যেন দ্রুত চালু করা যায় এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তাসহ সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ভবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছায়ানটের বাইরে বিজিবি ও পুলিশ কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্যদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণির হঠকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এ হামলা চালিয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ী হাদীর মৃত্যুতে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলা কেবল একটি ফৌজদারী অপরাধই নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থী।’

আরএমডি