বিনোদন

আমরা সবাই সবসময় নজরদারির মধ্যে থাকি

তামান্না ভাটিয়া হিন্দি, তেলেগু ও তামিল চলচ্চিত্রাঙ্গনে এমন এক অনন্য পথ তৈরি করেছেন, যেখানে বাণিজ্যিক জনপ্রিয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাহসী নতুন ধারার গল্প বলার চেষ্টা। ওটিটি দুনিয়ায় ‘জী কারদা’ ও ‘আখরি সাচ’-এর মতো কাজের মাধ্যমে তিনি অভিনয়ের নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছেন। আর ‘ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার’তে ডায়ানা পেন্টির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন, যেখানে তারা এক ডায়নামিক যুগল হিসেবে একটি ক্রাফট-বিয়ার স্টার্টআপ চালুর গল্প তুলে ধরেছেন। আগামী বছর মুক্তি পাবে তার বড় কাজ ‘ভিভ্যান: ফোর্স অব দ্য ফরেস্ট’। নাচ, অভিনয়ের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে শিগগিরই নিজের জুয়েলারি ব্র্যান্ড চালু করতে যাচ্ছেন তিনি। তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে ফিল্ম ফেয়ার অনলাইন। অভিনেত্রীর জন্মদিনে আজ সেটি অনূদিত হলো। 

প্রশ্ন: আপনি হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় সমানতালে কাজ করছেন। ভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি ও ভিন্ন ভাষায় কাজ শুরুর ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন? তামান্না ভাটিয়া: আমি যখন দক্ষিণের সিনেমায় কাজ শুরু করি, তখন খুবই ছোট ছিলাম। আমাকে যদি সত্যিই দক্ষিণ ভারতের অনেক ছবিতে কাজ করতে হতো, তাহলে ভাষা শেখাটা খুব জরুরি ছিল। প্রতিটি ভাষারই আলাদা আলাদা ভঙ্গি ও অভিব্যক্তি। সেগুলো আমি শিখেছিলাম সেই ভাষার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দক্ষিণের সংস্কৃতি বোঝা, কারণ আমি মুম্বাইয়ে বড় হয়েছি, সেখানেই পড়াশোনা করেছি। আমাকে যদি সিনেমায় সঠিকভাবে তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে হতো, তাহলে সেই সংস্কৃতিটা আমাকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করতে হতো। আমি হিন্দি ছবি দেখে বড় হয়েছি, তাই সেই সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার স্বাভাবিক ধারণা ছিল। শেষ পর্যন্ত দুদিকেই একটা সুন্দর ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, শুরুর দিকে যখন হিন্দি ছবিতে কাজ শুরু করি, তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেটাই। আমি তখন প্রায় ১০-১২ বছর ধরে দক্ষিণে কাজ করেছি এবং সেখানে আমার অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। মুম্বাইয়ের মানুষকে আমার বোঝাতে হয়েছিল যে, আমি আসলে মুম্বাইয়েরই মানুষ। এই দুই জায়গাই আমার জীবনের অংশ — একটা আমার কর্মভূমি, আরেকটা জন্মভূমি। তাই দুটোই আমার নিজের।

প্রশ্ন: একটু পেছনে ফেরা যাক। শুধু একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও ‘বাহুবলী’ আপনার কাছে বিশেষ কী অর্থ বহন করে? তামান্না ভাটিয়া: ‘বাহুবলী’ এমন একটা ছবি যেখান থেকে আমি সবচেয়ে বেশি শিখেছি। পুরো ছবিটাই আমরা গ্রিনস্ক্রিনে শুট করছিলাম, তাই অনেক কিছু কল্পনা করে নিতে হতো। আমি ভিএফএক্স সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি — কীভাবে সেটা সিনেমার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে। এই ছবিটা আমাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং নতুন কিছু করার সাহস জুগিয়েছে। এরপর থেকে আমি কে কী বলল সেসব নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দিয়েছি। বরং নিজের অন্তর্জ্ঞানকে বিশ্বাস করতে শিখেছি। এই ছবিটা আমার ব্যক্তিত্ব নিয়েও নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে।

প্রশ্ন: বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শুরু করে আধুনিক ওটিটি কনটেন্ট, সব ধারাতেই কাজ করেছেন আপনি। এখন কীভাবে নিজের চরিত্র বাছাই করেন? তামান্না ভাটিয়া: ফিল্মমেকিং সব সময়ই একটা টিমওয়ার্ক। তাই আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো টিম পাওয়া এবং তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করা। দেখলে মনে হয়, ওটিটি কনটেন্ট অনেক বেশি লেখক ও শিল্পীকেন্দ্রিক, যেখানে সিনেমা সব সময়ই পরিচালক কেন্দ্রিক হওয়া উচিত। তাই আমি যখন নতুন প্রজেক্ট বেছে নিই, তখন এই বিষয়গুলো মাথায় রাখি।

প্রশ্ন: ‘জী কারদা’ এবং ‘আখরি সাচ’-এ আমরা আপনাকে একেবারে ভিন্ন লেয়ারের চরিত্রে দেখেছি। ওটিটি কনটেন্টের অভিজ্ঞতা পারফরমার হিসেবে আপনাকে কীভাবে বদলে দিলো? তামান্না ভাটিয়া: যখন আপনি লঙ-ফর্ম কনটেন্টে কাজ করেন, তখন একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে যায় — আপনার চরিত্রকে সেখানে আলাদা করে মহান করে দেখানো হয় না। সিনেমার মতো ধীরগতির দৃশ্য বা স্লোমোশন শট সেখানে খুব কম থাকে। আপনাকে সম্পূর্ণ নিজের অভিনয় দক্ষতার ওপর নির্ভর করতে হয়, যেন মানুষ আপনার চরিত্রের অনুভূতি বুঝতে পারে। তাই পারফরম্যান্সগুলোও অনেক বেশি স্তরযুক্ত হতে হয়। ওটিটি কনটেন্টে চরিত্রের গভীরে ঢোকার, সূক্ষ্ম দিকগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায়। আমি সাধারণত কোনো দৃশ্য তিন-চার রকম করে প্র্যাকটিস করি, তারপর একটি বেছে নিয়ে শুট করি। এই স্বাধীনতাটা সিনেমায় সচরাচর থাকে না।

প্রশ্ন: ২০২০ সালের পর থেকে আপনার কাজের ধরনে একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। এখন তারকার চেয়ে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আপনাকে বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা কি সচেতনভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত? তামান্না ভাটিয়া: তারকাখ্যাতি সেই জিনিস, যা দর্শকরা একজন অভিনয়শিল্পীকে দেয়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল একজন ভালো অভিনয়শিল্পী হওয়া এবং অভিনয়কেই মূল কাজ হিসেবে দেখা। আমি মনে করি, তারকাখ্যাতি ব্যাপারটা আমার হাতে নেই। আমি যা করতে পারি তা হলো, প্রতিটি চরিত্রকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় ফুটিয়ে তোলা, আর তারপর আশা করা যে, মানুষের সেটা ভালো লাগবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার পছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, তেমন বদলেছে সিনেমার ধরনও। আমি কাজ শুরু করেছিলাম প্রায় ২০ বছর আগে, আর আমি জানি, সিনেমা আরও বদলাবে। কারণ আমি সারাজীবন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই থাকতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছেন। এখন কি মনে হয় আপনি সেভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন, যা আগে পাননি? তামান্না ভাটিয়া: এই ২০ বছরের যাত্রা আমাকে শুধু পৃথিবী নয়, নিজেকেও ভালোভাবে দেখতে শিখিয়েছে। বাইরের এই পথচলা একদিকে যেমন আমার কাজের অভিজ্ঞতা, তেমনি এটি আমার নিজের সঙ্গে এক গভীর সংযোগের গল্প। ওই সময়গুলো আমাকে অনেক অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে। কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজ করতে হয়, সেটা আমি এখন জানি। মানুষ এখন সেটা লক্ষ্য করে, মূল্যায়ন করে এবং সেই প্রশংসা আমাকে আনন্দ দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি একজন ভালো অভিনয়শিল্পী ও একজন ভালো মানুষ হিসেবে বদলেছি। 

প্রশ্ন: এখন যদি অতীতে ফিরে গিয়ে নিজেকে কোনো পরামর্শ দিতে বলা হয়, কী বলতেন? তামান্না ভাটিয়া: নিজের ওপর আরও বেশি বিশ্বাস রাখতে বলতাম। কারণ আমাদের চারপাশে সবসময় অনেক মানুষ থাকে, যারা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে নানান পরামর্শ দেয়। কিন্তু দিনশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি নিজে কী অনুভব করছেন সেটা শোনা। আপনার নিজের বিশ্বাসটাই আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে যায়, অন্য কিছু নয়।

প্রশ্ন: নতুন কিছু করা ও নিজের সত্যিকারের গতি-ছন্দে থাকার মধ্যে ভারসাম্য রাখেন কীভাবে? তামান্না ভাটিয়া: আমার ‘গতি’তে সত্যতা আসে তখনই, যখন আমি এমন পরিস্থিতির ভেতরে থেকেও নিজের সেরাটা দিতে পারি। ওইটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। যখন সবকিছু দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, নিজের ভেতরকার স্বর ছাড়া কিছুই শোনা যায় না, তখনই আমার প্রকৃত সত্তা জেগে ওঠে।

প্রশ্ন: আপনি একবার বলেছিলেন, আপনি আসলে ক্যামেরার সামনেই বেড়ে উঠেছেন। খ্যাতি কি সম্পর্ক বা ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে? তামান্না ভাটিয়া: হ্যাঁ, আমি ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরার সামনে। আমি বিশ্বাস করি, খ্যাতি কোনো মানুষকে বদলায় না, বরং সে আসলে ‘তুমি কে’, সেটা আরও স্পষ্ট করে তোলে। অনেকে খ্যাতি বা ক্ষমতাকে ভয় পান, কারণ তখনই মানুষের আসল ব্যক্তিত্বটা প্রকাশ পায়। আপনি ক্ষমতায় থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই বলে দেয় আপনি কেমন মানুষ।

আমি সবসময় নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছি। জানতাম, যদি আমি কোনো শপিং মল বা সিনেমা হলে ঢুকি, মানুষ চিনে ফেলবে, তবুও যেতাম। কারণ জীবনে আমি নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছি। আমি মানুষ পছন্দ করি, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। আমি আসলে এক্সট্রোভার্ট।

প্রশ্ন: উত্থান-পতনের সময়গুলোতে আপনাকে নমনীয় থাকতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কে রেখেছিলেন? তামান্না ভাটিয়া: বাবা-মা। তারা আমাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সাপোর্ট দিয়েছেন। তাই আমাকে কখনো বাইরের কারও স্বীকৃতি বা গ্রহণযোগ্যতা খুঁজতে হয়নি। আমি স্থির থাকতে পেরেছি, কারণ আমি আসলে কখনই মাটি থেকে পা সরিয়ে নিইনি। এ কৃতিত্ব আমার বাবা-মাকেই দিতে হয়। তারা যেভাবে ভালোবাসা, যত্ন ও সাপোর্ট দিয়েছেন, সেটা আমাকেও সংবেদনশীল ও স্থির থাকতে শিখিয়েছে।

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়া একদিকে স্বীকৃতি দেয়, অন্যদিকে চাপও তৈরি করে। মানুষের চোখের সামনে থেকেও আপনি কীভাবে নিজের মানসিক শান্তি ধরে রাখেন? তামান্না ভাটিয়া: অনেক সময় অতিক্লান্তিকর হয়ে যায় ব্যাপারটা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এত মত… সবসময় কিছু না কিছু বলছে মানুষ। তবে যদি বলা হয় যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ‘করো’ বা ‘করো না’, আমি করব। কারণ এটা এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আমি আমার গল্পটা নিজের মতো করে বলতে পারি। যখন দেখি গঠনমূলক সমালোচনা হচ্ছে, তখন সেটা গ্রহণ করি। কিন্তু যখন দেখি স্রেফ এলোমেলো মন্তব্য, তখন একদম গুরুত্ব দিই না।

প্রশ্ন: তামান্না সম্পর্কে এমন কী আছে যা সবাই জানে না, কিন্তু আপনি চান তারা জানুক? তামান্না ভাটিয়া: আমার ম্যানেজার মনে করেন, আমি মানুষটা মজার, অন্তত আমি আশা করি তিনি তাই ভাবেন (হাসি)। আমি চাই মানুষ জানুক, আমি আসলে বেশ রসিক। যদিও কথাটা একটু অদ্ভুত শোনায়।

প্রশ্ন: কাজের মধ্যে না থাকলে কীভাবে মানসিকভাবে ভালো থাকেন? তামান্না ভাটিয়া: আমি দিবাস্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। আসলে আমি একজন দুর্দান্ত ডেড্রিমার। আমি ভেসে বেড়ানো, কল্পনাময় মুহূর্তগুলো উপভোগ করি। কাজ না থাকলে আমি পুরোপুরি কাউচ পটেটো হয়ে যাই। কিছুই করি না, একদম নড়াচড়া পর্যন্ত করি না। এই ‘কিছু না করা’টা আমি উপভোগ করি। তাছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে, সিনেমা দেখতে, আড্ডা দিতে, কারও বাসায় বেড়াতে যেতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

প্রশ্ন: গত কয়েক বছর ফ্যাশনে আপনি এক রকম ঝুঁকিই নিয়েছেন। নিজস্ব স্টাইল সম্পর্কে আপনার এখনকার মত কী? তামান্না ভাটিয়া: আমার কাছে পোশাক-পরিচ্ছদও এক ধরনের আত্মপ্রকাশ। প্রতিদিন আমার অনুভূতি এক রকম থাকে না, পোশাকেও সেই পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়। অনেক সময় এটা নিছক একঘেয়েমি কাটানোরও উপায়। ফ্যাশনের ইতিহাস, বিভিন্ন সময়ের ব্র্যান্ডের ধরন, এসব থেকেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি এখন যে ঝুঁিক নেওয়া শিখেছি, সেটা আমি উপভোগ করি। এটা খেলাচ্ছলে হয়, সিরিয়াস কিছু নয়, মজার একটা এক্সপেরিমেন্টের মতো। কখনো সেটা সফল হয়, কখনো হয় না। কিন্তু সেটাও তো একজন শিল্পীর সৌন্দর্য! আপনি ভুল করার স্বাধীনতাও রাখেন।

প্রশ্ন: আপনি কানের রেড কার্পেটে হেঁটেছেন, বড় বড় ব্র্যান্ডের দূত হয়েছেন আবার গ্ল্যামার দুনিয়ায়ও রাজত্ব করছেন। আপনার কাছে সৌন্দর্যের মানে কী? তামান্না ভাটিয়া: নিজেকে গ্রহণ করতে পারাই নিঃসন্দেহে সৌন্দর্যে পৌঁছানোর বা সেটাকে ধারণ করার অন্যতম প্রধান উপায়। আজকাল নিজেকে মেনে নেওয়া খুব কঠিন কাজ। কারণ আমরা সবাই সবসময় নজরদারির মধ্যে থাকি। নিজের জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত, নিজের ত্রুটি, হয়তো যেগুলো তুমি পছন্দ করো না – সেগুলো মেনে নিতে পারা ভেতরে এক ধরনের ভারসাম্য আনে। সেই ভারসাম্যটাই সৌন্দর্য হিসেবে প্রকাশ পায়। বেশিরভাগ মানুষ বাহ্যিকভাবে যথেষ্ট পরিপাটি, কিন্তু আসলে বিষয়টা বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, এর চেয়েও অনেক গভীর কিছু।

প্রশ্ন: আপনি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলোতে বেশ খোলামেলা, সাহসী এবং বাছবিচার না করেই কথা বলেছেন। এই পরিবর্তনের কারণ কী? তামান্না ভাটিয়া: জীবনে এমন সময় ছিল যখন, আমি এখনকার মতো নিজেকে নিয়ে এতটা স্বস্তিতে ছিলাম না। এখন আমি নিজেকে ভালো এবং মন্দ দুরকম দিনই অনুভব করতে দিই। দুটো নিয়েই বাঁচি। সেই জায়গা থেকেই খোলামেলা ভাবটা আসে। আমি এখন নিজের পরিচয় নিয়ে একেবারেই সিরিয়াস না। মানে, আমি আমার কাজ নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস, কিন্তু আমি কে, এই ব্যাপারে আমি একেবারেই সিরিয়াস নই। এই হালকা ভাবটাই আমাকে অকপট বা স্বচ্ছ হতে সাহায্য করে। আমি যা বলি, তাতে এখন আর ফিল্টার লাগাই না।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, এখনকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ৩০ প্লাস বয়সী নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে আরও জটিল ও পরিণত সব গল্পে ঝুঁকছে?তামান্না ভাটিয়া: অবশ্যই। এখন অনেক চরিত্রই লেখা হচ্ছে যেগুলো সেই বয়সী নারীদের বাস্তব জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে। আগে কিন্তু আমরা তেমন নারী চরিত্র দেখতাম না। আমি যখন অভিনয় শুরু করি, তখন ভাবতাম, আমার ক্যারিয়ার হবে মাত্র ১০ বছরের। তারপর বিয়ে করব, সন্তান হবে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে, যখন আমি লেট টুয়েন্টিজে, তখনই আমি নিজের ভেতরকার শক্তি আর আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। আর তখনই ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে পরিপক্ক নারী চরিত্র লেখা শুরু করে। এটা শুধু ভারতেই না, সারা দুনিয়ায় একটা পরিবর্তন এসেছে।

আমি আসলে বুঝি না, মানুষ বয়সকে এত ভয় পায় কেন! সবাই যেন মনে করে, বয়স বাড়া একটা রোগ। অথচ বয়স বাড়া দারুণ একটা ব্যাপার। কিন্তু জানি না কেন মানুষ এটা নিয়ে এত ভয় পায়।

প্রশ্ন: সবশেষে বলুন, একজন নারী হিসেবে, একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে এবং ‘তামান্না’ হিসেবে আপনি কীসের জন্য ক্ষুধার্ত? তামান্না ভাটিয়া: এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় ক্ষুধা হচ্ছে, একটা পিজ্জা (হাসি)! কারণ এখন সেটা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। এর বাইরে বলতে পারি, আমি এখন জীবনের প্রায় সবকিছুই পাচ্ছি — ভালো চরিত্র, ভালো কাজের দিন, সবকিছুই চলছে এবং সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে। তবে হ্যাঁ, খাবারটা এখন বেশ মিস করি। কিন্তু একসময় মেনে নিতে হয়, তুমি কী বেশি ভালোবাসো, কাজ নাকি খাবার! আমি অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

আরএমডি