ধর্ম

কোরআন পথপ্রদর্শক ও রহমত

কোরআন তিলাওয়াত মুমিনের আত্মা ও অন্তরের খোরাক। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মুমিনের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়, ইমান দৃঢ় হয় এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তার অন্তরের সম্পর্ক তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের নিরাময়, আর মুমিনদের জন্য তা পথপ্রদর্শক ও রহমত। (সুরা ইউনুস: ৫৭)

গভীর চিন্তাভাবনাসহ কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশনা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ: ২৯)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ইমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা: ১২১)

অর্থাৎ কোরআন যথার্থভাবে তিলাওয়াতের সঙ্গে ইমানের সম্পর্ক আছে। যে কোরআন চিন্তাভাবনা করে যথার্থভাবে তিলাওয়াত করে, তার অন্তরে কোরআনের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়, সে কোরআনের ওপর ইমান আনে।

তাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য নিয়মিত বুঝে ও চিন্তাভাবনা করে কোরআন তিলাওয়াত করা। কোরআনের কিছু অংশ মুখস্ত করারও চেষ্টা করা যা সে নামাজে ফরজ ও নফল নামাজগুলোতে তিলাওয়াত করবে। কোরআনহীন অন্তরকে নবীজি (সা.) বিরান ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যার অন্তরে কোরআনের কোনো অংশ নেই, তা বিরান ঘরের মতো। (সুনানে তিরমিজি: ২৯১৩)

অন্যান্য দ্বীনি গ্রন্থ পাঠ করা বা আলোচনা করার চেয়ে নিয়মিত কোরআন ও কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পাঠ ও আলোচনাকে বেশি ‍গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অনেকে অন্যান্য দ্বীনি বইপত্র পড়লেও অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ সরাসরি কোরআন পাঠ করাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। অনেকে ভাবে, কোরআনের অর্থ বুঝে পাঠক করা সাধারণ মানুষের জন্য না, শুধু আলেম বা ইসলামি জ্ঞানে পণ্ডিত ব্যক্তিরাই কোরআন বুঝতে পারেন। এই ধারণা সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, আর আমি তো কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা কামার: ১৭)

তাবেঈ হারিস আওয়ার (রহ.) বলেন, একদিন দেখলাম কিছু লোক মসজিদে বসে হাদিস বা দ্বীনের অস্পষ্ট ও জটিল বিষয় নিয়ে অতিমাত্রায় বাকবিতণ্ডা করছে। আমি হজরত আলীর (রা.) কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে বললাম। আলী (রা.) বললেন, তারা এ কাজ করছে নাকি! আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন,  আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে ফেতনা শুরু হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের মধ্যকার বিতর্কের ফয়সালার পদ্ধতিও আছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোনো অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কোরআন ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তার অহংকার চূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এ কোরআন হলো আল্লাহর মজবুত রজ্জু, জিকির ও সত্য সরল পথ।

কোরআন অবলম্বন করে কোন প্রবৃত্তি বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা জবানের কষ্ট হয় না। প্রজ্ঞাবানগণ কোরআন পড়ে বিতৃষ্ণ হয় না। এ কোরআন বার বার পাঠ করলে পুরনো হয় না। এ কোরআনের বিস্ময়কর তথ্য অশেষ। কোরআন শুনে জিনরাও স্থির থাকতে পারেনি । তারা কোরআন শুনে বলে উঠেছিল, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে পথ দেখায়; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। (সুরা জিন: ১, ২) 

যে কোরআন অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য বলে, যে কোরআন অনুযায়ী আমল করে, সে প্রতিদান লাভ করে, যে কোরআন অনুযায়ী বিচার-আচার করে, সে ন্যায়বিচার করে, যে মানুষকে কোরআনের দিকে ডাকে, সে সিরাতে মুস্তাকিম বা সত্য সরল পথের দিশা লাভ করে। (সুনানে তিরমিজি: ২৯০৬)

ওএফএফ