শিক্ষা

সপ্তাহ পেরোলেই নতুন শিক্ষাবর্ষ, এখনো ছাপা বাকি ১০ কোটি বই

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে আগামী ১ জানুয়ারি। সেদিনই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু বই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, এখনো ১০ কোটিরও বেশি বই ছাপানো বাকি। মাত্র এক সপ্তাহে এতসংখ্যক বই ছাপা, বাঁধাই, কাটিং করে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব নয়। ফলে এবারও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী বছরের শুরুতে হাতে বই পাচ্ছে না। বই ছাড়াই অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্যমতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সব বই ছাপা শেষ। প্রাথমিকের বই সব উপজেলায় পৌঁছে দেওয়ার কাজও শেষ। কিন্তু ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশমের পৌনে ১০ কোটি বই এখনো প্রস্তুত হয়নি। পাশাপাশি ইবতেদায়ি ও কারিগরির কিছু বই ছাপানো বাকি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ২৯ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৬ কপি বই ছাপানোর কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এসব বই ছাপা শেষ করার রূপরেখা হাতে নিয়েছিল সরকার। এরপর তা দেশের সব উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে এক দফা টেন্ডার বাতিলসহ নানা জটিলতায় বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও তা ভেস্তে গেছে, যার মাশুল গুনতে হবে শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুনতদন্ত করতে ১১৭ ছাপাখানা মালিককে তলব, প্রক্রিয়া নিয়ে ‘প্রশ্ন’বই ছাপার জামানতের অর্থছাড়েও এনসিটিবিতে ‘বকশিশ বাণিজ্য’এবারও বই উৎসব ফিকে হওয়ার ‘শঙ্কা’

মাধ্যমিকের (সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি) ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বই ছাপানোর বিষয়টি দেখভাল করে এনসিটিবির বিতরণ শাখা। পাশাপাশি এ শাখা থেকে মাদরাসার ইবতেদায়ির বই ছাপার বিষয়টিও সমন্বয় করা হয়।

এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ২৯ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৬ কপি বই ছাপানোর কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এসব বই ছাপা শেষ করার রূপরেখা হাতে নিয়েছিল সরকার

বিতরণ শাখা সূত্র জানায়, এবার মাধ্যমিক, দাখিল, কারিগরির ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১৮ কোটি ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪০ কপি বই ছাপা হবে। এরমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯ কপি, সপ্তম শ্রেণিতে চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২, অষ্টম শ্রেণিতে চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ এবং নবম-দশমের পাঁচ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি। এছাড়া ইবতেদায়ির বইয়ের সংখ্যা তিন কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৭ কপি।

মাধ্যমিকের কোন শ্রেণির কতটি বই ছাপা বাকিষষ্ঠ শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯ কপি। এরমধ্যে ছাপা ও বাঁধাই হয়েছে দুই কোটি ৯৪ লাখ চার হাজার ৬৬৭ কপি, যা শতাংশের হিসাবে ৬৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণির আরও এক কোটি ৪৯ লাখ ১২ হাজার ৮৪২টি বই ছাপানো বাকি।

সপ্তম শ্রেণিতে মোট বই চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ কপি, যার মধ্যে ছাপানো ও বাঁধাই শেষ হয়েছে মাত্র ১ কোটি ২৯ লাখ ৩ হাজার ৭২৯টি। ছাপানো বাকি রয়েছে দুই কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৬২ কপি বই। সপ্তম শ্রেণিতে মাত্র ৩১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছে।

পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমের বই ছাপার কাজে আমরা পিছিয়ে আছি। ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চসংখ্যক বই ছাপার কাজ চলছে। আশা করি, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সব বইয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।—পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান

অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার অবস্থা বেশি বেগতিক। এ শ্রেণিতে মোট চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ কপি বই প্রয়োজন। সেখানে ছাপা হয়েছে মাত্র ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১টি বই। ছাপানো ও বাঁধাই বাকি রয়েছে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৫৬টি বই। শতাংশের হিসাবে মাত্র ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে, আর বাকি রয়েছে ৯০ দশমিক ১৪ শতাংশ বইয়ের কাজ।

নবম-দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজ কিছুটা এগিয়েছে। নবম-দশমে পাঁচ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি বইয়ের দরকার। তার বিপরীতে ছাপানো হয়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৪৭৮ কপি বই। ছাপানো বাকি রয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯০ কপি বই। নবম-দশমের ৬৮.১৪ শতাংশ বই ছাপা শেষ। ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ বইয়ের কাজ এখনও বাকি।

মাদরাসার ইবতেদায়িতে এবার বইয়ের চাহিদা ৩ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৭টি। ছাপানো হয়েছে দুই কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮০টি। বাকি রয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৭টি বই। ইবতেদায়ির ৯৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বইয়ের কাজ বাকি।

আরও পড়ুনভোটের আগে নতুন বই পাবে না মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাবই ছাপা নিয়ে এবারও ‘ঘোর সংকট’

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান জাগো নিউজকে বলেন, পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমের বই ছাপার কাজে আমরা পিছিয়ে আছি। ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চসংখ্যক বই ছাপার কাজ চলছে। আশা করি, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সব বইয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

আমরা চেষ্টা করছি, ছাপাখানা মালিকদের তাগাদা দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত এ দুটি শ্রেণির বইয়ের কাজও শেষ করতে। আশা করি, জানুয়ারির মধ্যেই সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাবে।—শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারী

প্রাথমিকের সব বই পৌঁছে গেছে উপজেলায়মাধ্যমিকের বই ছাপা-বিতরণ নিয়ে সংকট দেখা দিলেও প্রাথমিকের সব বই ছাপা শেষে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে এনসিটিবি। প্রাথমিকের বই ছাপা-বিতরণ দেখভাল করে উৎপাদন শাখা।

বিতরণ শাখার কর্মকর্তারা জানান, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। শতভাগ বই ছাপা, বাঁধাই, কাটিংয়ের কাজ শেষে বিতরণে জন্য উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকের শতভাগ বই প্রস্তুত। আমরা দুদিন আগেই সব বই উপজেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে নিয়ে ক্লাস করতে পারবে।

এনসিটিবিতে নিয়মিত কোনো চেয়ারম্যান নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারীকে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিকের কাজ শেষ। ইবতেদায়ির বইও ছাপা শেষ হয়ে যাবে। মাধ্যমিকের চার শ্রেণির বই শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় প্রয়োজন। নবম-দশম ও ষষ্ঠ শ্রেণির বই খুব বেশি দেরি হবে না। ষষ্ঠ ও সপ্তমের বই ছাপানোতে কিছুটা পিছিয়ে আছে।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ছাপাখানা মালিকদের তাগাদা দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত এ দুটি শ্রেণির বইয়ের কাজও শেষ করতে। আশা করি, জানুয়ারির মধ্যেই সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাবে।

এএএইচ/এমকেআর/জেআইএম