টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে দীর্ঘ সময় মিটিং করার ক্ষেত্রে বিসিবি নিঃসন্দেহে প্রথম স্থানে থাকবে। বিসিবির মত ম্যারাথন মিটিং আর কোনো বোর্ডের হয় কি না, সন্দেহ! লম্বা সময় ধরে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের মিটিং করার ক্ষেত্রে বিসিবি দিনকে দিন নতুন রেকর্ড গড়ে চলেছে।
আজ ২৪ ডিসেম্বর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবির কার্যালয়ে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের মিটিং হলো সাড়ে ৭ ঘণ্টা ব্যাপি। তাও যদি হতো, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবুও মানা যেত। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। ‘পর্বতের মুষিক প্রসবে’র মতোই হলো পুরো ব্যাপারটা। মূলতঃ মিটিংয়ে বড় ধরনের কোন নতুন সিদ্ধান্তই নেয়া হয়নি। বুধবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, অনেকগুলো ইস্যু থাকে। সেগুলো আলাপ আলোচনা ও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত আকারে আনতে সময় লেগে যায়। তাই আজকের সভাটি অনেকটা সময় ধরে চলেছে।
বিসিবি মিডিয়া কমিটি প্রধানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে সিলেটে যে এবারের বিপিএলের দ্বাদশ আসর শুরু হতে যাচ্ছে, তার প্রথম দিনের দুই ম্যাচের টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। একটি টিকিটও বিক্রি বাকি নেই।
বিসিবি মিডিয়া কমিটি প্রধান আরও জানান, সব টিকিট দেয়া হয়েছে অনলাইনে। এমনিতে কোন টিকিট কাউন্টারে আলাদা কোন টিকিট বিক্রি করা হয়নি। এরপর বিসিবি পরিচালক আমজাদ জানান, এবারের বিপিএল উদ্বোধন করবেন ক্রীড়া সচিব।
এছাড়া আজ বুধবারের বোর্ড সভায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ক্রিকেটকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং ৪০টি জেলায় আগামী বছর লিগ চালুর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
এছাড়া নারী ক্রিকেটকে আরও আকর্ষণীয় ও জমজমাট করতেও উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পূর্বশর্ত হিসেবে নারী প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের দলগুলোকে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে প্রিমিয়ার নারী লিগের প্রতিটি দলকে পৌনে ৭ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলোকে দেওয়া হবে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে।
নারী ক্রিকেট লিগের দলগুলোকে যে টাকা দেয়া হতো। তা বাড়ানো হবে। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোকে দেয়া হবে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর প্রথম বিভাগের সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
এছাড়া বিসিএলের আদলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাইজিং স্টার অনুর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। বোর্ডের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আরও কিছু নতুন পদ তৈরি এবং নতুন লোক নিয়োগের চিন্তা ভাবনা চলছে। একজন সিএফও নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত।
এছাড়া আগামী বছর সারা দেশের ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও মাঠে নতুন ১০০টি উইকেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিসিবি পরিচালক ও গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান খালেদ মাসুদ পাইলট জানান, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে চাইলে মাঠ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা (বিসিবি) আগামী বছর ১০০টি উইকেট বানাতে চাই।’
পাইলট জানান, ‘পূর্বাচলের মাঠের উন্নতি হয়নি। সেখানে আশা করছি ১০+ ১০, মোট ২০টি উইকেট হবে। বিভাগীয় ভেন্যু গুলোতে গড়-পড়তা ৫টি করে উইকেট আছে। বরিশাল খুব সুন্দর মাঠ। আউটফিল্ডের ৬০ ভাগ কাজ শেষ। বরিশালের বিপিএল অ্যারেঞ্জ করতে চাইলে ১৫টি উইকেট বানানো সম্ভব।’
মাঠ কেনার ব্যাপারে আলাপ হয়নি। যে মাঠগুলো আছে, সেগুলোকে খেলা উপযোগী করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। পূর্বাচলের মাঠে যে ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকার মাটি চুরি হয়েছে, সেই মাটি চুরির কোন আপডেট আছে কি না? কে বা কারা মাটি চুরি করেছে? তা কি বের করা গেছে?
সাংকাদিকদের এ প্রশ্নর জবাবে বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নাহ! আপডেট নেই। তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে জানা ও বোঝা যাবে কারা এর সাথে জড়িত। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তবে সে তদন্ত কমিটিতে গ্রাউন্ডসের কেউ থাকবে না। ৪ জনের কমিটি হয়ে গেছে। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন বোর্ডে।’
এআরবি/আইএইচএস/