আন্তর্জাতিক

অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ক্যারিবীয় প্রবালপ্রাচীর

গত চার দশকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রবালপ্রাচীর। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে হার্ড কোরাল কভার প্রায় ৪৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র সামুদ্রিক তাপপ্রবাহই এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট সমুদ্রতলের মাত্র ১ শতাংশ জুড়ে প্রবালপ্রাচীর রয়েছে। এ ১ শতাংশ প্রবাল বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল। তাই প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হওয়া মানে সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্ক (জিসিআরএমএন)-এর তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ প্রবালপ্রাচীরের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এসব তাপপ্রবাহ প্রবালের ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র শৈবাল বা মাইক্রোঅ্যালজি-কে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই শৈবালই প্রবালের প্রধান খাদ্য ও শক্তির উৎস। অতিরিক্ত তাপে এগুলো বিষাক্ত হয়ে ওঠে, ফলে প্রবাল তাদের বের করে দেয়। এর ফলে ঘটে প্রবাল বিবর্ণতা।

গবেষণার সম্পাদক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. জেরেমি উইকার্ট জানান, ২০২৩–২০২৪ সালে ক্যারিবীয় অঞ্চল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ তাপজনিত চাপের মুখে পড়ে। বিগত বছরগুলোতে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ হারে রেকর্ড পরিমাণ কোরাল কভার হ্রাস পেয়েছ।

ড. উইকার্ট বলেন, ডাইভিংয়ের সময় আমি নিজ চোখে দেখেছি,সব প্রবাল সাদা হয়ে গেছে। একটিও রঙিন প্রবাল নেই। মাঠপর্যায়ে এটা দেখা আর গ্রাফে দেখা এক নয়। বাস্তবে দেখলে মানসিকভাবে খুবই নাড়া দেয়।

প্রবালপ্রাচীর ক্যারিবীয় অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন ও মৎস্য খাতের মাধ্যমে প্রতিবছর এই প্রবালপ্রাচীরগুলো অঞ্চলটির অর্থনীতিতে প্রায় ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখে। প্রবাল ধ্বংস হলে শুধু সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ছাড়াও লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ও উপকূলীয় সুরক্ষাও হুমকির মুখে পড়বে।

ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রবালপ্রাচীর রক্ষায় দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে সতর্ক বার্তা বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রবালপ্রাচীর ভবিষ্যতে আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়েছে।

সূত্র : নিউজ ইন্টারন্যাশনাল

কে এম