মতামত

স্মার্টফোন কি আমাদের সম্পর্কগুলোকে দুর্বল করে তুলছে?

আমরা যারা শহরে থাকি, তারা বছরে অন্তত একবার গ্রামের বাড়ি বা অন্য কোথাও বেড়াতে যেতে চাই। উদ্দেশ্য হলো নাগরিক কোলাহল ও কৃত্রিম পরিবেশ থেকে বেরিয়ে যেন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারি। বাচ্চাদের নিয়ে যাই মাটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। তারা যেন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, পাখি, মাটি, নদী, সমুদ্র, মাছ, ফসল, ফলমূল চিনতে শেখে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম বছরান্তে একবার দু’বার দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়াই ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ। আমাদের গ্রামের বাড়ি প্রায় সাড়ে চারশো কিলোমিটার দূরে বলে অনেক কষ্ট করে সেইপথ পাড়ি দিতে হতো। কারণ তখন যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল বেশ খারাপ। তাও আমাদের উৎসাহের শেষ ছিল না। সারা গ্রামজুড়ে ভাইবোনরা ছুটাছুটি করতাম। হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধা, চি-বুড়ি খেলতাম। সবাই মিলে মহাউৎসাহে খাওয়া-দাওয়া, পিকনিক করতাম, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির পেছনে ছুটতাম, মৌমাছির তাড়া খেতাম।

দাদা-দাদির আদর ভালোবাসায় ভরে থাকতাম। সন্ধ্যাকালে ভাইবোনরা কুপি আর হারিকেনের আলোয় গুটিসুটি হয়ে গল্প করতাম। বড়রা জিন-পরি ও ভূতের গল্প শুনাতো। কেরোসিনের স্বল্প আলোয় ভূতের গল্প শুনে, চারিদিকে যেন তাদের ছায়া দেখতে পেতাম। এছাড়া টিনের চালে বাতাসের ধাক্কা ও পাতা পড়ার শব্দ শুনেও ভূত ভেবে চমকে উঠতাম। এছাড়া দিনভর গল্প গুজব, লুডু, ক্যারম খেলা ও দোলনায় দোল খাওয়া তো ছিলই।

স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে মনোযোগ কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, অন্যের সফলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দেখে হিংসা তৈরি হয় এবং ঘন ঘন রাগ করতে দেখা যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ক্রমেই সেই ব্যবহারকারী তার কাছের সঙ্গী-সাথিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যার যত বেশি আসক্তি, তার তত বেশি বিষণ্নতা ও একাকিত্ব। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব বেশি শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে।

এরপর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। গ্রামীণ জীবনেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিভিন্ন প্রয়োজনে সন্তানরা সবাই শহরমুখী হয়েছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, টেলিভিশন, ফ্রিজ, স্মার্টফোন, ওয়াইফাই, ডেটানেট সবই আছে সবার হাতে হাতে। অনেক ঘরবাড়ি পাকা হয়েছে। গরুর গাড়ি, সাইকেলের জায়গায় এসেছে অটোরিকশা, ট্রাক, মোটরসাইকেল।

কয়েক বছর আগেও দেখেছি আমাদের বাচ্চারা গ্রামে গিয়ে খেলাধুলা করছে। জমিতে নেমে গা ভেজাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনের আগমনে গ্রামে গিয়েও বাচ্চারা একটা বড় সময় মোবাইলে চোখ রাখছে। বাইরে গেলেও ঘরে ঢুকেই মোবাইল। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময়ও লক্ষ্য করলাম জানালা দিয়ে প্রকৃতি না দেখে গাড়িতে বসেই মোবাইল দেখছে। ওদের ডাকাডাকি করে প্রকৃতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি আমরাও মোবাইলে কথা বলা, ফেসবুকিং করা থামাতে পারছিলাম না। এতো মানুষ একসাথে হয়েও গল্পের পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং চলছিল। ভেবে দেখলাম কতটা পরিবর্তন হয়েছে আমাদের।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনেকেই স্মার্টফোন ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারেন না। টেলিফোন আগে ছিল শুধু যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদানের বাহন। কিন্তু বর্তমানে বিশেষ করে স্মার্টফোন আসার পরে আমরা ফোনের বিভিন্ন কারিসমার উপরে পুরোই নির্ভরশীল হয়ে উঠেছি। বিভিন্ন এ্যাপের ব্যবহার স্মার্টফোনকে করে তুলেছে চরম ক্ষমতাধর একটা যন্ত্র।

ঘরেই বসে দুনিয়ার সংবাদ পাওয়া থেকে শুরু করে ছবি-ভিডিও আদান প্রদান, নিউজ চ্যানেল, ডকুমেন্টরি দেখা, অফিসের কাজ করা, নাটক-মুভি-কার্টুন দেখা। এইসব দেখতে দেখতে নিজেদের একান্ত সময় যে কখন পার হয়ে যাচ্ছে, আমরা বুঝতে পারি না। এই না বুঝতে পারাটাকে একধরনের আসক্তির ফলও বলা যায়।

সুবিধার পাশাপাশি এই আসক্তির নানাধরনের অপকারিতাও আছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে এখন ৪০০ কোটির বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের শরীর ও মনের জন্য নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার মানুষের ব্রেইন, দৃষ্টিশক্তি ও শিশুদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিশুরা বই পড়া ভুলে যাচ্ছে এবং ইউটিউবের মাধ্যমে ভাবতে শুরু করেছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিশুরা ইউটিউবের দেখানো জগৎকেই নিজের জগৎ বলে মনে করছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোর প্রয়োজনবোধ করে না।

এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে উঠে এসেছে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘাড়, কাঁধ, কনুই এবং হাতে পেশিজনিত ব্যথার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ২০২২ সালে ‘স্প্রিঙ্গার নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে স্মার্টফোনে শিক্ষার্থীদের আসক্তি শরীরের অঙ্গভঙ্গিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন এনে এ ধরনের ব্যথার সৃষ্টি করছে। এ ধরনের শারীরিক সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের উপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়াও ফোনের পেছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। পড়াশোনার বা কাজের সময় থেকে অনেকটা সময়ই ফোন খেয়ে ফেলে। ফোন স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু তথ্য সামনে আসতে পারে, যার ফলে অস্থিরতা, বিরক্তি, রাগ, মনোযোগের অভাব বা উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। এতে করে পড়াশোনা, কাজ বা সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হতে পারে।

স্মার্টফোনে আসক্ত হলে কমে যেতে পারে ঘুম, বেড়ে যেতে পারে হতাশা, উদ্বেগ। মনের ভেতর তৈরি হতে পারে একধরনের অপ্রাপ্তিবোধ। কারণ বাটন টিপলে চটকদার দুনিয়ার অনেককিছুই চোখের সামনে এসে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের সাজানো-গোছানো জীবনের সঙ্গে নিজের তুলনা করলে নিজেকে মূল্যহীন মনে হয়, যা বিষণ্নতার কারণ হয়। এতে ক্ষোভ, রাগ, হিংসা বাড়তে পারে, যা সামাজিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

বর্তমান যুগে স্মার্টফোন খুব জরুরি একটি মাধ্যম। কিন্তু এটি ব্যবহারের প্রতি মানসিক বা আচরণগত নির্ভরশীলতা খুব বিপজ্জনক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সবার মনোযোগে ঘাটতি, ঘুম সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, উদ্বেগ এবং দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তবে মনোবিজ্ঞানীরা এখন বেশি ভাবছেন অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে যে মানসিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব বাড়ছে সেই দিকটি নিয়ে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়লে একাকিত্বের অনুভূতিও তীব্র হতে বাধ্য। আমরা নিজেদের অবস্থান থেকেই লক্ষ করছি যে এখন পরিবারে বাবা-মা, সন্তান সবাই ফোন নিয়ে ব্যস্ত, অথচ সবাই এক বিছানাতেই পাশাপাশি শুয়ে আছে।

মা-বাবা তার সন্তানকে গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারছেন না বলে হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছেন। ফলে সন্তান বিচ্ছিন্নভাবে বড় হচ্ছে। বাসায় গেট-টু-গেদার হচ্ছে, লক্ষ করবেন সেখানে উপস্থিত শিশু-কিশোর ও তরুণরা নিজেদের মধ্যে গল্প বা আড্ডা না দিয়ে সবাই ফোন টিপছে। ফোনের মাধ্যমেই পাশের জনকে মেসেজ পাঠাচ্ছে, হাসাহাসি করছে, গল্প করছে।

অদ্ভুত এক যোগাযোগ ব্যবস্থা এদের। পাশাপাশি বসে সামনাসামনি কথা না বলে, ভার্চুয়ালি কথা বলা। কেউবা খেলা দেখছে, কেউবা ইন্টারন্যাশনালি গেইম খেলছে বা অন্য কোন গেইম খেলছে স্মার্টফোনে। এসময় ঘরের মধ্যে বাজ পড়লেও কেউ টের পাবে বলে মনে হয় না। এতে যে একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, একাকী থাকার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে এটা কেউ বুঝতে পারছে না। স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা পাশের বন্ধু বা স্বজনের চাইতে তাদের কাছে বেশি প্রয়োজনীয় স্মার্টফোন বা যন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ। অনেকেই অভিযোগ করেন পরিবারে স্বামী ঠিকমতো সময় দিচ্ছেন না। অফিস থেকে ঘরে ঢুকেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। একই অভিযোগ স্ত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দু’জনে আর দু’জনার থাকছেন না। দু’জনেই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ে।

এমনকি এমনও দেখা যায় দুই বন্ধু বা জুটি কোনো রেস্তোরাঁয় বসে আছে, তাদের সামনে ধূমায়িত কফির কাপ বা গ্লাসে ঠান্ডা পানীয়, অথচ দু’জনের চোখ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। কিন্তু কেন, কেন তাদের নিজেদের কোনো গল্প নেই? গবেষণা বলছে, বাস্তব জীবনের সামাজিক মেলামেশা কমে যাচ্ছে বা গেছে এবং মানুষ ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বেশি জড়িয়ে পড়ছে বলেই তাদের গল্প কমে গেছে। তাতে করে সামগ্রিক জীবনে সন্তুষ্টিও কমে যাচ্ছে। সবচাইতে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে মানুষ তা বুঝতেও পারছে না।

স্মার্টফোন কাজে লাগে, কোন কোন সমস্যার সমাধানও করে দেয়, ঘরে বসে বাইরের জগৎকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়, জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে কিন্তু পাশাপাশি মানুষকে একাকী ও বন্ধুহীনও করে দেয়। ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু বা পরিচিতজন কিন্তু সবসময় আপনার আমার পাশে এসে দাঁড়াবে না, দাঁড়ানো সম্ভবও হয় না। তখন দরকার হয় পরিবার, স্বজন ও বাস্তব জগতের বন্ধুদের। অথচ কখন যে আমরা ক্রমশ তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি, তা খেয়ালই করি নাই।

এই কথাগুলো শুধু ধারণার উপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে না। স্মার্টফোন আসক্তির সঙ্গে একাকিত্ব ও বিষণ্নতার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা জানতে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা দেখেছেন, স্মার্টফোনে আসক্তির সঙ্গে একাকিত্ব ও বিষণ্নতার সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণার তথ্যমতে, যে-সব তরুণ-তরুণী বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাদের বিষণ্নতা ও একাকিত্বের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তারা বলেছেন ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ায় আশেপাশে স্মার্টফোন না থাকলে তারা উদ্বিগ্ন বোধ করেন।

কমিউনিকেশন অ্যাপের সচেতন ব্যবহার এবং বাস্তব সম্পর্কের সাথে তা পরিপূরক হলে একাকিত্ব কমে। স্মার্টফোন বা কোন অ্যাপ নিজে থেকে খারাপ নয়, কিন্তু ব্যবহারের ধরনই নির্ধারণ করে এর প্রভাব। আমরা যদি স্ক্রিন টাইম সীমিত করে, মুখোমুখি সময় বাড়িয়ে তুলতে পারি তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। বাংলাদেশে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের কারণে বিভিন্ন খারাপ ঘটনা ঘটছে, বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে।

বিভিন্ন গবেষণা, রিপোর্ট এবং সংবাদ থেকে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তির হার খুব বেশি। যুবকদের মধ্যে ৬১.৪% স্মার্টফোন আসক্ত (যা বিশ্ব গড়ের চেয়ে অনেক বেশি)। এতে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘাড়-পিঠের ব্যথা এবং স্থূলতা বাড়ছে।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই আসক্তি অমনোযোগিতা, আগ্রাসী আচরণ এবং মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। প্রিস্কুলারদের মধ্যে আসক্তির হার ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এজন্য অবশ্য অভিভাবক ও বাবা-মা দায়ী। তারা সন্তানকে সময় না দিয়ে মোবাইল বা অন্য ডিভাইস হাতে তুলে দেন।

অন্য একটি তথ্য বলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবারবুলিং বেড়েছে। ২০২২ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী, অনলাইন অপরাধের ৫২% ছিল সাইবারবুলিং (যেমন অশ্লীল মেসেজ, অপমানজনক পোস্ট)। এগুলো কিশোরী ও নারীর মধ্যে ভয়, অপমানবোধ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। যতো বেশি স্ক্রিন টাইম বাড়ছে, এইধরনের সমস্যাও বাড়ছে পাশাপাশি। কারণ সবাই এর সময় ব্যবহারে সচেতন নন।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনভলবড হলে মুখোমুখি ও সামাজিক যোগাযোগ কমে গিয়ে একাকিত্ব বেড়ে যায়। একাকিত্ব মানুষকে স্মার্টফোনে আরও আসক্ত করে, আর আসক্তি বাস্তব সম্পর্ককে দুর্বল করে একাকিত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। এটি একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে।

স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে মনোযোগ কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, অন্যের সফলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দেখে হিংসা তৈরি হয় এবং ঘন ঘন রাগ করতে দেখা যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ক্রমেই সেই ব্যবহারকারী তার কাছের সঙ্গী-সাথিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যার যত বেশি আসক্তি, তার তত বেশি বিষণ্নতা ও একাকিত্ব। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব বেশি শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে।

তাহলে এর সমাধান কী? সমাধান হলো সচেতন ব্যবহার, স্ক্রিন টাইম সীমিত করা, মুখোমুখি যোগাযোগ বাড়ানো, সন্তানকে বেশি সময় দেয়া, বইপড়ার অভ্যাস বাড়ানো, সামাজিক সম্পর্ক, গল্পগুজব, বেড়ানো, শখ তৈরি করা বাড়াতে হবে। একাকিত্ব অনুভব করলেই বন্ধু-পরিবারের সাথে মুখোমুখি বসে সময় কাটাতে হবে।

২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।

এইচআর/এএসএম