৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০১৭ সালের মার্চে দেশত্যাগের পর এই প্রথম দেশে ফিরলেন তিনি। তার আগমনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীর বাইরেও মানুষের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো। ২৫ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশের আকাশসীমায় এসে তারেক রহমানের ‘৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে’ স্ট্যাটাসকে ঘিরে নানা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জানাচ্ছেন, আগামীর বাংলাদেশে তাদের প্রত্যাশা।
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ নামের এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘ফেরা। আনন্দের। প্রতীক্ষার। কখনো সখনো হয় না যদিও। তবে বহুদিনের পর, মায়ের কোলে ফেরা, প্রফুল্লতার। প্রাশান্তির। তৃপ্তির। জনাব তারেক রহমান, যদি তিনি নাও হোন, একজন রাজনীতিক। কিংবা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, তবু। তবুও তার ফেরা, একজন বাংলাদেশি হিসেবে উৎসবের। তার পরিবার, নিকটজন, শুভানুধ্যায়ী, অনুসারী আর বন্ধুমহলে। দেশ থেকে যোজন যোজন দূরে। যে পড়ে থাকে। ধরে থাকে প্রতীক্ষা-বৃক্ষের ফল হয়ে, একদিন পক্ব হবার আশায়। কেবল সে-ই জানে। সেই স্বদেশের ভেজা মাটি তীর্থের অধিক।’
সাংবাদিক ফারুক আলম লেখেন, ‘শীতের সকালে সোনালি রোদে শুভ সকাল। চরম নির্যাতনের মুখে দেশ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। আশাবাদী, লিডার যেন শুধু দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে আবদ্ধ না থেকে, দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান, উন্নয়ন ও ন্যায় বিচারের দিকে নজর রাখতে পারেন। তাহলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপোসহীন নেত্রীর সম্মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। এবার এক অন্য তারেক রহমানকে দেখবে বাংলার মানুষ-এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। তাই চেটে নয়, সবাই খেটে খান।’
প্রবাসী সাংবাদিক আহমাদুল কবির লেখেন, ‘দেড় যুগের নির্বাসন—কেবল সময় নয়, এক দীর্ঘ বেদনাবহ অধ্যায়। মাটির টান, মানুষের টান, দেশের টান—সবকিছুকে বুকে চেপে রাখা অপেক্ষা। আজ ফেরা মানেই নতুন করে আশা জাগা। বাংলাদেশের রাজনীতি যেন এই ফেরার মাধ্যমে আরও মানবিক, আরও গণতান্ত্রিক হয়।’
মো. তোফাজ্জল তালুকদার মামুন নামের একজন লেখেন, ‘দীর্ঘ নির্বাসনের শেকল ভেঙে, গর্জে উঠেছে ইতিহাসের হাঁক। এসো বজ্রকণ্ঠে, এসো ঝড়ের আহ্বানে। বাংলাদেশ, বুক চিতিয়ে বলো, স্বাগতম, তারেক রহমান। নতুনের কেতন উড়িয়ে বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়।’
আরও পড়ুন‘স্বাগতম আপনাকে এই সোনার বাংলার মাটিতে’ থার্টি ফার্স্ট ঘিরে আশরাফুলের অভিনব উদ্যোগ
গিয়াস আহমেদ নামের একজন লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ দেশের পথে। তিনজনই ইনশাআল্লাহ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের হাল ধরবেন। জিয়া পরিবার আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা ও সক্ষমতা আগেই প্রমাণ করেছেন। দল ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রশ্নে তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই—কারণ ঐক্যই শক্তি, আর ঐক্যই দেশের ভবিষ্যৎ।’
শঙ্কর মৈত্র নামের একজন লেখেন, ‘সুস্বাগত মি. তারেক রহমান। আপনার নেতৃত্বে সুস্থ, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। যে কালো শক্তি ভর করেছে দেশের রাজনীতির আকাশে, আপনার নেতৃত্বে তা দূর হবে এটাই প্রত্যাশা। আমরা শন্তি চাই, আধুনিক বাংলাদেশ চাই। আপনাকে যারা মহামানব বানিয়ে ফেলছে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবেন। তেলবাজ সাংবাদিক, তেলবাজ আমলাদের কাছ থেকে দূরে থাকবেন। ইতিমধ্যে এদের তেলবাজি দেখে আতঙ্কিত। নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির নামে আপনাকে যেন জনতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা না হয়। আপনি মাটি ও মানুষের কাছে থাকবেন। এই মাটির একজন নেতা প্রয়োজন, যিনি শুধুই দেশটাকে ভালোবাসবেন, জাত ধর্ম বর্ণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবেন। আপনার মধ্যে তা দেখতে চাই।’
মাসুদ রায়হান পলাশ লেখেন, ‘‘আরে ব্যাটা তোর যদি সাহস থাকে, বাংলাদেশে ফিরে আয়। আমরা তোকে একটু দেখি।’ ওপরের কথা বলেছিলেন সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ তিনি গণপ্রতিরোধের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। সেজন্য, আগামীর কথা ভেবে সবাইকে পথচলা উচিত। আপনারা যারা রাজনীতি করেন, শিক্ষা নিয়েন এ ঘটনা থেকে।’
হেলাল উদ্দিন লেখেন, ‘৬,৩১৪ দিন! তারেক রহমানের এই বক্তব্য কোনো সাধারণ ভ্রমণ-আপডেট নয়। একজন মানুষের দীর্ঘ নির্বাসনের ভার বয়ে নেওয়া অনুভূতির প্রকাশ। বাংলাদেশের আকাশে ঢুকেই তারেক রহমানের এই অনুভূতি তাৎপর্যপূর্ণ। বছরের পর বছর, দিনের পর দিন—দেশের মাটি, জনগণ, পরিবারের কাছে থাকা, মায়ের পাশে দাঁড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার নীরব যন্ত্রণা—এই সংখ্যার ভেতরে জমে আছে।’
সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলন লেখেন, ‘এই অব্যক্ত ভাষাহীন অনুভূতিটুকু কাজে লাগাবেন এই দেশ ও জাতির কল্যাণে। সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নিয়ে এই অভাগা দেশকে আলোকিত করার কাজে জীবনকে উৎসর্গ করবেন, এই প্রার্থনা করছি। এই দেশকে দুই বছরেই মালয়েশিয়া বানানো যায়। আমরা পারি না, এমন কিছু নেই। স্বাগতম আপনাকে এই সোনার বাংলার মাটিতে।’
এসইউজে/এসইউ