রাজনীতি

১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাসিত জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরেছেন তিনি। তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়েছে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মী ও ভক্ত-সমর্থকের। তার এ প্রত্যাবর্তন নেতাকর্মীদের প্রতীক্ষার অবসানই শুধু নয়, বিএনপির রাজনীতির নতুন পথেরও সূচনা। আগামীর সংকল্পেরও বার্তা।

তৎকালীন ওয়ান/ইলেভেন সরকারের আমলে দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান। এরপর দেশের রাজনীতিতে গড়িয়েছে অনেক জল। একে একে কেটে গেছে ১৭টি বছর। অবশেষে দেশের আকাশে প্রবেশ করেই আবেগঘন স্ট্যাটাসে তারেক রহমান লিখেছেন— ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’

১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান যখন দেশ ছেড়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো বটেই, দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতাও তিনি। তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুনদেশের আকাশসীমায় ঢুকে যে অনুভূতি প্রকাশ করলেন তারেক রহমানঅবশেষে ঢাকায় তারেক রহমান

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-কন্যাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।

সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে বিমানটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে যাত্রাবিরতির পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি স্পর্শ করে। বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এসময় তিনি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুলাকুলি ও কুশলবিনিময় করেন এবং উপস্থিত সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এর আগে গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত সোয়া ১২টা) তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে রাজধানীর পথে পথে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো হয়েছে বর্ণিল ব্যানার ও ফেস্টুন।

তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে গত কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা প্রতিটি প্রবেশমুখে ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর। তাদের চোখেমুখে ছিল উল্লাস আর কণ্ঠে ছিল নেতার ফিরে আসার আগমনী স্লোগান।

আরও পড়ুনতারেক রহমানের অপেক্ষায় গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়ি

এদিকে, তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা ঘিরে ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও গত কয়েকদিন ঘরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে তার নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি।

গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ৩০০ ফিটে গণসংবর্ধনা মঞ্চে যোগ দেবেন। সমাবেশে শুধু তারেক রহমানই বক্তব্য দেবেন। সমাবেশ শেষে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। সেখান থেকে তিনি যাবেন গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায়। তিনি এ বাসায়ই থাকবেন।

এমকেআর/এমএস