দেশজুড়ে

মেহেরপুরে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না সার

চাষাবাদের ভরা মৌসুমে প্রয়োজনীয় সার সংগ্রহ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মেহেরপুর জেলার কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম না দিলে মিলছে না সার- এমন অভিযোগ উঠেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে। ফলে উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

এদিকে সময়মতো সার না পেলে ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার একাধিক সার ডিলার পয়েন্টে একই চিত্র। সরকারি দামে সার চাইলে ‘মজুদ নেই’ বা ‘বরাদ্দ শেষ’- এমন অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। অথচ খোলাবাজারে কিংবা অতিরিক্ত টাকা দিলেই সেই সার মিলছে অনায়াসে। এতে সরকারি ভর্তুকির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষকরা।

মেহেরপুর সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন চলতি মৌসুমে ১৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, ১০ বিঘা জমিতে কপি এবং আরও ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।

তিনি জানান, পটাশ সারের জন্য একাধিকবার ডিলারের গোডাউনে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

বাবুল হোসেন বলেন, গোডাউনে সার আছে, আমরা নিজের চোখে দেখেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে চাইলে বলে- সার নেই। আর খোলাবাজারে বেশি দাম দিতে চাইলে তখনই সার বের করে দেয়। এটা কীভাবে সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সার না পেলে ফসলের ফলন কমে যাবে। এতে শুধু লোকসানই নয়, ঋণের বোঝাও বাড়বে। আমরা চাষ করি দেশের জন্য, অথচ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদেরই।

বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সদর উপজেলার আরেক কৃষক মোমিনুল ইসলাম।

তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যে এখন কোনো সারই পাওয়া যাচ্ছে না। পটাশ বা এমওপি সারের ক্ষেত্রে বস্তাপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিলেই কেবল চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে।

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি- সব সারের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফসলের দাম যদি না পাই, তাহলে চাষ করে আমরা টিকবো কীভাবে।

জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন অধিকাংশ চাষি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে বেশি দামে সার কিনছেন, আবার কেউ কেউ সার না পেয়ে জমিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারছেন না।

মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের কৃষক আহসানুল হক অভিযোগ করেন, ডিলার গোডাউনে সার থাকা সত্ত্বেও তা নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে না। বেশি টাকা দিলে তবেই সার পাওয়া যায়- এই বাস্তবতা এখন ওপেন সিক্রেট।

কৃষকদের অভিযোগ, ডিলার পর্যায়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে। এতে সরকার ঘোষিত ভর্তুকি কার্যত কৃষকের হাতে পৌঁছাচ্ছে না।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর বড় বাজারের সার ব্যবসায়ী সাইদ আহমেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কিছুটা কম থাকায় সাময়িক চাপ তৈরি হয়েছে। তবে প্রকৃত অর্থে সারের তীব্র সংকট নেই।

তিনি দাবি করেন, ডিলারদের কাছে সীমিত বরাদ্দ আসছে, ফলে সবাইকে একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন তিনি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সনজীব মৃধা জানান, কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার নিশ্চিত করতে টিম গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ডিএপি ও এমওপি সারের মোট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৬০ টন। এই বিপুল চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ব্যবস্থায় সামান্য ঘাটতি কিংবা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা থাকলেই পুরো ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।

আসিফ ইকবাল/এনএইচআর/এএসএম