সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের ধরনও বদলে গিয়েছে। চিঠির অপেক্ষায় দিনের পর দিন কাটানোর দিন আর নেই। এখন অ্যাপের কারণে হাতের মুঠোয় হাজারও অপশন। পরিচয়ের আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নজর রাখলেই পছন্দের মানুষের খুঁটিনাটি অনেকটাই জেনে নেওয়া যায়।
তবু কাউকে ভালো লাগলেই মনের কথা সরাসরি বলা যায় না। সেই জায়গায় ভরসা হয়ে ওঠেন বন্ধুরা।কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়-এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় সকলেই বন্ধুদের পরামর্শ চান।
কিন্তু ঠিক এখানেই লুকিয়ে থাকে বিপদ। বর্তমান সময়ে সম্পর্ক ভাঙার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বন্ধুদের অতিরিক্ত নাক গলানো। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকে না। অনেকেই সম্পর্কে জড়ানোর আগেই ভাবতে শুরু করেন-আমার বন্ধুরা ওকে পছন্দ করবে তো? নিজের অনুভূতি যতই গভীর হোক না কেন, বন্ধুদের সম্মতি ছাড়া সম্পর্ক এগোনো নিয়ে অনেকেই নিশ্চিত হতে পারেন না।
এটা সব সময় নিরাপত্তাহীনতা থেকে আসে, এমন নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর পেছনে কাজ করে বন্ধুদের প্রতি অগাধ ভরসা। কিন্তু সেই ভরসাই কখনো কখনো সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুরা ধীরে ধীরে আপনার এবং সঙ্গীর মাঝখানে বন্ধুরা ঢুকে পড়ে, যা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
সম্পর্কে থাকলে পরামর্শ নেওয়া দোষের নয়, কিন্তু সীমা না মানলে সেই পরামর্শই হয়ে উঠতে পারে বিচ্ছেদের কারণ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কিছু জিনিস মানলে ব্যক্তিগত সম্পর্কও সুরক্ষিত থাকবে, আবার বন্ধুত্বও অটুট থাকবে।
১. সীমানা তৈরি করুন নিজের সম্পর্কের সীমানা আগে থেকেই স্পষ্ট করে নেওয়া খুব জরুরি। কোন বিষয়গুলো একান্ত ব্যক্তিগত আর কোনো বিষয়গুলো বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করা যেতে পারে- এই সীমারেখা আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে।
সম্পর্কের প্রতিটি খুঁটিনাটি বন্ধুদের জানানো প্রয়োজন নেই। বরং নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যত কম তথ্য আপনি অন্যদের দেবেন, তত কম সুযোগ তারা আপনার ব্যক্তিগত পরিসরে নাক গলাতে পারবে।
২. নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া সব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখুন। বন্ধুদের পরামর্শ শুনতে পারেন, কিন্তু শেষ সিদ্ধান্তটি যেন আপনার নিজের হয়। কারণ সম্পর্কটি আপনার, বন্ধুর নয়।
৩. চ্যাটের বিষয় আলোচনা না করা প্রেমিক বা প্রেমিকার ব্যক্তিগত কথা কখনোই বন্ধুদের সামনে আলোচনা করবেন না। এতে সঙ্গীর মনে অনিরাপত্তা তৈরি হয় এবং বিশ্বাসে ধীরে ধীরে চিড় ধরে। অনেক সময় কথার ভুল ব্যাখ্যা বা অতিরঞ্জিত আলোচনা থেকেও অপ্রয়োজনীয় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়, যা সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়। তাই সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যক্তিগত কথাবার্তা ব্যক্তিগতই রাখা সবচেয়ে নিরাপদ।
৪. মাঝেমাঝে কঠোর হনমাঝে মাঝে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে একটু কঠোর হওয়াও জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে এমন সংক্ষিপ্ত উত্তর দিন, যাতে সেখান থেকে আর বাড়তি প্রশ্ন করার সুযোগ না থাকে। একটি বিষয় মনে দৃঢ়ভাবে স্থির রাখুন- প্রশ্নকারী যত ঘনিষ্ঠই হোন না কেন, কাউকে খুশি করার দায় আপনার নেই। পাশাপাশি ভদ্র কিন্তু স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিন, ব্যক্তিগত প্রশ্নে আপনি স্বচ্ছন্দ নন। এতে আপনার সীমারেখাও বজায় থাকবে, আবার অপ্রয়োজনীয় অস্বস্তিও এড়ানো যাবে।
সব উপায় ব্যর্থ হলে সরাসরি প্রতিবাদ করাই সবচেয়ে কার্যকর। স্পষ্টভাবে বন্ধুকে জানিয়ে দিন যে তার এ ধরনের ব্যক্তিগত প্রশ্ন বা নাক গলানো আপনাকে বিরক্ত করছে। নিজের অস্বস্তির কথা পরিষ্কারভাবে বললে অনেক সময়ই পরিস্থিতি বদলায়। আর এতে যদি বন্ধুত্বে দূরত্ব তৈরি হয়, তবু নিজের ব্যক্তিগত পরিসর রক্ষা করাটা তার চেয়েও বেশি জরুরি।
সূত্র: ফেমিনা, মিডিয়াম ও অন্যান্য
আরও পড়ুন:ফোনে রাখা প্রাক্তনের ছবি যেভাবে ক্ষতি করে যে কারণে মানুষ সম্পর্কে জড়ায়
এসএকেওয়াই/