ময়মনসিংহের ভালুকায় গণপিটুনিতে নিহত দিপু চন্দ্র দাসকে চাকরি ছেড়ে দিতে আসামিরা চাপ সৃষ্টি করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিনগত মধ্যরাতে উপজেলার ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর এলাকা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার হলেন ১৮ জন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা নূর আলম (৩৩), তারাকান্দা থানা এলাকার বাসিন্দা শামীম মিয়া (২৮), সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানা এলাকার তাকবির (২২), ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন (৪২), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা সেলিম মিয়া (২২) ও মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা মাসুম খালাসী (২২)।
এসব তথ্য জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ভালুকার ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন দিপু চন্দ্র দাস পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার ভেতরে ছিলেন। কারখানার সামনে মানুষ জড়ো হতে থাকলে তাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়।
রাত ৯টার দিকে দিপু চন্দ্রকে কারখানা থেকে বের করে দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস ভালুকা মডেল থানায় বাদী হয়ে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। পরে র্যাব-পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। আসামিদের তিনদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক।
তারা হলেন পাইওনিয়ার নিটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেন (৪৬), শ্রমিক তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার (২২), মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯) ও নিঝুম উদ্দিন (২০); ভালুকার বাসিন্দা আজমল হাসান (২৬) আশিকুর রহমান (২৫), কাইয়ুম (২৫) ও শাহিন মিয়া (১৯) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা মো. নাজমুল (২১)।
নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। দুই বছর ধরে তিনি পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানায় কর্মরত ছিলেন।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/এমএস