বাংলাদেশের পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল কে হচ্ছেন—এ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতপাড়ায় চলছে নানান গুঞ্জন। বিশেষত বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন—এমন ঘোষণার পর থেকে সেই গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে আইনাঙ্গনের বাতাসে। এরপর থেকেই সামনে আসছে অনেকের নাম। বিদ্যমান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্যে থেকে কাউকে এ পদে উন্নীত করা হবে, নাকি নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে—আছে এমন প্রশ্নও।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের জন্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এক্ষেত্রে কয়েকজনের নাম খুব জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন—অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আরশাদুর রউফ ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক। এছাড়া বিএনপিপন্থি প্রভাবশালী আইনজীবীদের নামও শোনা যাচ্ছে। যাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকও রয়েছেন।
সংবিধানের ৬৪ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হইবার যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগদান করিবেন।’
বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন—এমন খবর এখন সর্বত্র। তিনি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তাই, এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জোর লবিং চালাচ্ছেন অনেক আইনজীবী।
আরও পড়ুনঅ্যাটর্নি জেনারেল শনিবার পদত্যাগ করবেনবিএনপির মনোনয়ন পেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
সূত্রের তথ্য, পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন দোলনের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মনোনয়ন নিশ্চিত হলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল?
সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন অ্যাটর্নি জেনারেল। সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দান করবেন।’ উপ-অনুচ্ছেদ ৪-এ বলা হয়েছে, ‘তিনি রাষ্ট্রপতির সন্তোষ অনুযায়ী স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজেকে বলেন, তফসিল ঘোষণা এবং মনোনয়নপত্র কেনার পর রাষ্ট্রের বর্তমান প্রধান আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করলেই হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবেন।
বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রয়েছেন, মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার ভুঁঞা, মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও মোহাম্মদ অনীক আর হক। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েই কর্মরত রয়েছেন তারা। সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে নিয়োগ দেওয়ার মতো নাম শোনা যাচ্ছে অনেকের। তাদের মধ্যে রয়েছেন—ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার এম. বদরুদ্দোজা বাদল এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশাদুর রউফঅতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্যে থেকে পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পাওয়ার আলোচনায় রয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বারে তার সুনাম রয়েছে। তিনি সাবেক বিচারপতি ও সাবেক সফল প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুর রউফের ছেলে। ব্যারিস্টার রউফ বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যারিস্টার অনীক আর হকজ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সমন্বয়কদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার অনীক আর হকের নামও আলোচনায় রয়েছে।
ব্যারিস্টার এম. বদরুদ্দোজা বাদলবিএনপিপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত তিনি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়কও। দলীয় আদর্শ থাকলেও সব মত ও পথের আইনজীবীদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুলা) কমিটির আহ্বায়ক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল রিটের অন্যতম আইনজীবীও।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলব্যারিস্টার কাজল বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে সুপরিচিত মুখ। অভিজ্ঞ ও মেধাবী আইনজীবী হিসেবেও পরিচিত। বিএনপির প্যানেল থেকে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের দুইবারের নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবিধানিক বিভিন্ন আলোচিত মামলার শুনানিতে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুসের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায়।
আব্দুল জব্বার ভুঁইয়াসুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তাদের একজন অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভুঁইয়া। ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট তাদের নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বারের সুপরিচিতি আইনজীবী। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় আসামিপক্ষে আইনি লড়াই করেছেন। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায়ও তিনি ছিলেন আসামিদের আইনজীবী। সর্বশেষ, গ্রামীণফোন তথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও আইনজীবী ছিলেন।
ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন দোলনসিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহউদ্দিন দোলন ‘সার্ভিস ম্যাটার’ সংক্রান্ত মামলার জন্য খ্যাতি পান। বেশ কিছু মামলার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলোচনায় আসেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ১৭ বছর আগে অনুষ্ঠিত ২৭তম বিসিএস উত্তীর্ণদের নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দিতে আপিল বিভাগ থেকে রায় পাওয়া। চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফউদ্দিনের আইনজীবীও তিনি।
সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে আইনি লড়াই চালান। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কট্টর সমালোচকও তিনি।
শরীফ ভূইয়াতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়ার নামও রয়েছে পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে।
বিএম ইলিয়াস কচিসুপ্রিম কোর্ট বারের সুপরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট বিএম ইলিয়াস কচি। তিনি সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে ২০১৭-১৮ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি পরিচালনা করেছেন।
এছাড়া বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীও অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পাওয়ার আলোচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম