বেশিরভাগ মানুষ মুরগির লেগপিস খেতে বেশি পছন্দ করেন। অনেকের ধারণা, লেগপিসের মাংস বেশি সুস্বাদু ও নরম, আর ব্রেস্টপিস তুলনামূলকভাবে শক্ত ও খেতে কষ্টকর। তাই স্টেক বা বিশেষ রান্না ছাড়া অনেকেই চিকেন ব্রেস্টপিস এড়িয়ে চলেন। কিন্তু জানেন কি, স্বাস্থ্যের দিক থেকে মুরগির ব্রেস্টপিসই সবচেয়ে উপকারী অংশ? পুষ্টিবিদদের মতে, এই অংশের মাংস পেশি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক মুরগির ব্রেস্টপিস খেলে কোন কোন উপকার পাবেন-
১. পেশির ক্ষয় রোধ করে চিকেন ব্রেস্টপিসে থাকে উচ্চমাত্রার লিন প্রোটিন, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ১০০ গ্রাম সেদ্ধ ব্রেস্টপিসে প্রায় ৩১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এতে চর্বির পরিমাণ কম এবং প্রোটিন বেশি থাকায় এটি পেশি গঠনে সহায়তা করে এবং পেশির ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শুধু তাই নয়, ব্রেস্টপিসে থাকা প্রোটিনে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা পেশির কোষ গঠন ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, জিমে যান বা শরীর ফিট রাখতে চান, তাদের জন্য চিকেন ব্রেস্টপিস একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।
২. হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করেলো ফ্যাট হওয়ায় মুরগির ব্রেস্টপিস হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। গবেষণা অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম মুরগির ব্রেস্টপিসে মাত্র প্রায় ৩.৬ গ্রাম ফ্যাট থাকে। কম ফ্যাটের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ব্রেস্টপিস অন্তর্ভুক্ত করলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করবে চিকেন ব্রেস্টপিসে ভিটামিন বি-৬, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন ও রাইবোফ্লাভিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন রয়েছে, যা শরীরের এনার্জি উৎপাদন বাড়াতে এবং মেটাবলিজম সঠিক রাখতে সহায়তা করে।
এই ভিটামিনগুলো খাবার থেকে শক্তি তৈরি করতে শরীরকে সক্রিয় রাখে, ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে ক্লান্তি কম অনুভূত হয়। তাই যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, ব্যায়াম করেন বা কর্মব্যস্ত জীবনে শক্তি ধরে রাখতে চান, তারা খাদ্যতালিকায় নিয়মিত চিকেন ব্রেস্টপিস রাখতে পারেন।
৪. হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে পাঁজরের মাংসে ফসফরাস, সেলেনিয়াম ও পটাসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল পাওয়া যায়, যা শরীরের নানা কার্যক্রমে সহায়ক। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। সেলেনিয়াম শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পটাসিয়াম শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে মুরগির ব্রেস্টপিস মাংস ওজন নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকর। ১০০ গ্রাম সেদ্ধ চিকেন ব্রেস্টপিসে প্রায় ১৬৫ ক্যালোরি থাকে। কম ফ্যাট ও কম ক্যালোরির কারণে ডায়েট মেনে চলা ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিন সোর্স। ব্রেস্টপিস দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা কমে, আবার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরিও যোগ করে না।
সঠিকভাবে রান্না করলে ব্রেস্টপিসের মাংসও সহজেই নরম ও সুস্বাদু করা যায়। সেদ্ধ, গ্রিল বা হালকা ঝোল করে রান্না করলে এটি চিবোতে কষ্ট হয় না এবং পুষ্টিগুণও ভালোভাবে বজায় থাকে। অতিরিক্ত তেল-মসলা ব্যবহার না করে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে রান্না করাই সবচেয়ে ভালো। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এই অংশের মাংস রাখলে শরীর থাকবে শক্তিশালী, ফিট ও সুস্থ।
সূত্র: হেলথলাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য
আরও পড়ুনশীতকালীন যে সবজি ওজন কমাতে সাহায্য করে যে কারণে ডাক্তার শীতে গাজর খেতে বলেন
এসএকেওয়াই/