ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে গাইবান্ধার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জেলার সড়ক ও জনপথ। তীব্র শীতের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় নদীর পাড়ের মানুষের জন্য টিকে থাকার আরও কঠিন এক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকে সকালে কাজে যেতে পারছে না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
গাইবান্ধা পৌরসভার সুখ শান্তির মোড় এলাকার অটোরিকশাচালক রাহান আলম বলেন, ‘কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তারপরও সামনে ঠিকমতো দেখা যায় না। ঠান্ডার কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই যাত্রীও কমে গেছে।’
পুলবন্দি এলাকার আজগর আলী বলেন, ‘সকালে কাজে বের হতে খুব কষ্ট হয়। এত ঠান্ডায় শরীর অবস হয়ে যায়। কাজ না করলে সংসার চলে না, আবার এ শীতে কাজ করাও কঠিন।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লার চরের বাসিন্দা বদিউজ্জামান বলেন, ‘শীতে আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের অবস্থা একেবারে খারাপ। বাতাসের সঙ্গে নদীর পানি মিশে মনে হয় আসছে। এখানে বর্তমানে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ছে।’
এদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর ভিড় বেড়েছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।’
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. সোহেল বলেন, ‘শীতে প্রত্যেককে সতর্ক থেকে গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। বিশেষ করে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও। গাইবান্ধা শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে জিপি মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, টুপি ও শীতবস্ত্র কিনতে দেখা যাচ্ছে নানা বয়সি মানুষকে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজ বলেন, ‘সকাল থেকে গাইবান্ধার তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন শীত ও কুয়াশার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় সরকারিভাবে ২২ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্য আরও বেশ কিছু কম্বল শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
আনোয়ার আল শামীম/আরএইচ/জেআইএম