জাগো জবস

বিসিএসের জন্য আলাদা কিছু পড়তে হয় বলে বিশ্বাস করি না

মো. ফাহিম শাকিল ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম নওগাঁ জেলা শহরে। তিনি নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার গল্প, পড়াশোনা এবং নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—মো. ফাহিম শাকিল: যমুনা নদীর কোলঘেঁষা নওগাঁ জেলা শহরে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমার বাবা অ্যাডভোকেট মো. মোকছেদুর রহমান। তিনি নওগাঁ জেলা বারের একজন স্বনামধন্য ও সিনিয়র আইনজীবী। শৈশবে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এই স্কুল থেকে ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জন করি। ২০১০ সালে একই বিদ্যালয় থেকে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ (জেলায় ২য় স্থান অর্জন) গোল্ডেন এ+ পাই। ২০১৩ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড স্টাইপেন্ডসহ গোল্ডেন এ+ পাই। ২০১৫ সালে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ড স্টাইপেন্ডসহ গোল্ডেন এ+ প্রাপ্ত হই। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। ২০২১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণাপত্র আছে এবং নানা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।

জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?মো. ফাহিম শাকিল: জেলা শহরে বড় হওয়ার সুবাদে স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের কর্মতৎপরতা ছোটবেলা থেকেই নজরে এসেছে। তখন থেকেই একটি পজিটিভ সামাজিক পরিবর্তন আনার নিরবচ্ছিন্ন কর্মযজ্ঞের একটি ক্ষুদ্র পার্ট হওয়ার ইচ্ছে ছিল।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?মো. ফাহিম শাকিল: ছোটবেলা থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছে কাজ করতো। তাই চেষ্টা করেছি যে শ্রেণিতেই পড়েছি; সেই শ্রেণির পাঠ খুব ভালোভাবে রপ্ত করতে। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব পাঠের মূল্য বিসিএসে পাওয়া যায়। বিসিএসের জন্য আলাদা কিছু পড়তে হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান ও গণিত এগুলো মৌলিক বিষয়। এসবের বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে। প্রচুর বই পড়েছি। মূল বইয়ের বাইরেও ভালো যা বই পেয়েছি, পড়েছি। সাহিত্যও পড়েছি। প্রতিদিন দুটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পড়তাম, যা আমার লেখার মান ও বাচনভঙ্গিকে আরও শাণিত করেছে। প্রশাসন ক্যাডারে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৫৬তম হতে এসব ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।

আরও পড়ুনবিসিএস প্রস্তুতির কৌশল জানালেন সুলতান মাহমুদ ‘টুয়েলভথ ফেইল’ গল্পের মতো বিসিএস ক্যাডার আমিনুল 

জাগো নিউজ: ৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে অনুভূতি কেমন ছিল?মো. ফাহিম শাকিল: সেই সময়টা এখনো স্বপ্নের মতো মনে হয়! মা, বাবা ও ছোটবোন মোহনা সাথে ছিল। সকলকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। সবার চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু। স্বপ্নজয়ের খুশি বোধহয় এমনই হয়, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?মো. ফাহিম শাকিল: আমার অনুপ্রেরণা মূলত আমার পরিবার। মা-বাবা ও বোনের কথা বলবো। আমার মা মিসেস সোহেলী মাগফুরা রহমান, একজন উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েট। তার কাছেই আমার পড়ালেখার হাতেখড়ি। আমার মরহুম দাদা-দাদি, নানা-নানির কথা মনে পড়ছে। তারা আমার অনুপ্রেরণা। দাদুভাই মরহুম বছির উদ্দীন আহমেদ ও নানুভাই মরহুম দেওয়ান আবদুল কাদের উভয়েই শিক্ষক ছিলেন।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?মো. ফাহিম শাকিল: নতুনদের উদ্দেশ্যে বলবো, প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পত্রিকা পড়ুন। ভালো ভালো আর্টিকেল পড়ুন। এসব পড়তে পড়তে কখন যে আপনার শব্দচয়ন ও লেখার মান উন্নত হয়ে পড়বে; আপনি নিজেই টের পাবেন না। প্রমিত বাংলা ও ইংরেজি বলার চর্চা করুন। প্রতিদিন যা পড়ছেন, তা দিনশেষে রিভিউ করুন। প্রচুর লেখার অভ্যাস করুন। মৌলিক বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিন। নিজ নিজ দুর্বলতা খুঁজে বের করে প্রচুর চর্চা করুন।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. ফাহিম শাকিল: প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করবো। সামনে যেসব ট্রেনিং এবং শেখার সুযোগ আমার জন্য অপেক্ষা করছে; সেসব লুফে নিতে উন্মুখ হয়ে আছি।

এসইউ