দীর্ঘদিন ধরেই পতনের মধ্যে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে দিন যত যাচ্ছে তত অবমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে সার্বিক বাজার। বর্তমানে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম তলানিতে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড, জ্বালানি ও ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয়ের যে কয়টি হাতিয়ার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত বা পিই। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মুক্ত ধরা হয়। আর কোনো কোম্পানির পিই ১০-এর নিচে চলে গেলে, ওই কোম্পানির শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়।
বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পিই ৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এই পিই ছিল ৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। অর্থাৎ চলতি মাসেই ডিএসইর পিই দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট কমেছে।
সার্বিক শেয়ারবাজার অবমূল্যায়িত অবস্থায় থাকলেও পিই বিবেচনায় কয়েকটি খাতের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চো ঝুঁকিতে রয়েছে চাড়মা ও সিরামিক খাত। এই দুই খাতের পিই বর্তমানে ৬০ এর ওপরে রয়েছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে মন্দা থাকায় এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত। বর্তমান বাজার বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। বিনিয়োগকারীরা যদি ভালো করে তথ্য পর্যালোচনা করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে এই বাজার থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে সব থেকে কম পিই রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের। এই খাতের পিই রয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে, যা ডিসেম্বরের শুরুতে ছিল ৩ দশমিক ২৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের পিই কিছুটা বেড়েছে।
পরের অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি খাত। এই খাতের পিই ৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট, যা ডিসেম্বরের শুরুতে ছিল ৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। ব্যাংক খাতের পিই ৬ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট, ডিসেম্বরের শুরুতে এই খতের পিই ৬ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টেই ছিল।
এছাড়া ওষুধ খাতের পিই ৯ দশমিক ১০ পয়েন্ট থেকে কমে ৯ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট হয়েছে। আর আর্থিক খাতের পিই ৯ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট থেকে কমে ৯ দশমিক ৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপরদিকে বর্তমানে সব থেকে বেশি পিই সিরামিকস খাতের। এই খাতের পিই ৮৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট, যা ডিসেম্বরের শুরুতে ছিল ৮১ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। সর্বোচ্চ পিই’র তালিকায় এর পরের স্থানে রয়েছে চামড়া খাত। এই খাতের পিই ৬০ দশমিক ১২ পয়েন্ট, যা ডিসেম্বরের শুরুতে ছিল ৬০ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট।
এছাড়া পাট খাতের ২৬ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট থেকে কমে এখন ২৬ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। কাগজ ও মুদ্রণ খাতের পিই ২১ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট থেকে কমে ২১ দশকি ৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাকি খাতগুলোর পিই ২০ এর নিচে রয়েছে।
এর মধ্যে প্রকৌশল খাতের পিই ১০ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট, বস্ত্র খাতের ১০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট, সেবা খাতের ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতের ১২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট থেকে কমে ১২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
টেলিকম খাতের পিই ১৩ দশমিক ২৪ পয়েন্ট থেকে কমে ১২ দশমিক ৭১ পয়েন্ট, ভ্রমণ খাতের ১৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট থেকে কমে ১২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট, বিমা খাতের ১২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট, আইটি খাতের ১৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট থেকে কমে ১৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট, বিবিধ খাতের ১৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট থেকে কমে ১৫ দশমিক ১২ পয়েন্ট এবং খাদ্য খাতের ১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এমএএস/ইএ/এমএস