শিক্ষা

খসড়া অধ্যাদেশে চেয়ারম্যান মন্ত্রীর, বিচারপতির মর্যাদায় সদস্যরা

দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ কমিশনের নাম বদলে যাচ্ছে। কাজের ধরনেও আসছে বড়সড় পরিবর্তন। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদমর্যাদা বাড়ানোসহ নানাভাবে ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইউজিসির নতুন নাম ‘বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন’ করে একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর এ খসড়া প্রকাশ করা হয়। খসড়ার ওপর আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা মতামত দিতে পারবেন। এরপর অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য চূড়ান্তভাবে উপস্থাপন করা হবে।

‘বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুমোদন হলে ইউজিসি গঠনে ১৯৭৩ সালের ‘দ্য ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন অব বাংলাদেশ অর্ডার’ রহিত হবে। তবে নতুন সরকার গঠন ও সংসদ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এ অধ্যাদেশ অনুমোদনের সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন চেয়ারম্যান, সদস্যরা বিচাপতির

নতুন অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশনে চেয়ারম্যান ও ৮ জন সদস্য থাকবেন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রী পদমর্যাদার এবং কমিশনারদের পদমর্যাদা হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমান।

বিদ্যমান অধ্যাদেশে ইউজিসিতে একজন চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্য থাকেন সর্বোচ্চ পাঁচজন। পাশাপাশি ৯ জন খণ্ডকালীন সদস্য থাকেন। তবে উচ্চশিক্ষা কমিশনের খসড়া অধ্যঅদেশ পাস হলে সেখানে খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন ১০ জন।

সার্চ কমিটি গঠন কীভাবে, কারা থাকবেন

উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। তিন সদস্যের এ কমিটির প্রধান হবেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অথবা আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

তার সঙ্গে থাকবেন ইউজিসির প্রাক্তন একজন চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপকদের একজন। সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে ন্যূনতম দুজনের নাম সুপারিশ করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দেবেন।

চেয়ারম্যান-সদস্যদের অপসারণ ক্ষমতা

ইউজিসির বিদ্যমান অধ্যাদেশমতে, হাইকোর্টের বিচারপতিকে যেসব কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারণ করা যায়, ইউজিসির চেয়ারম্যানকেও একইভাবে অপসারণ করা যাবে। আর সরকার ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্ণকালীন সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি যেসব কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হন, তেমন কারণ ও পদ্ধতি ছাড়া উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের অপসারণ করা যাবে না। অর্থাৎ, গুরুতর অসদাচরণ কিংবা দায়িত্ব পালনে অসমর্থতার প্রমাণ পেলেই কেবল রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অপসারণ করতে পারবেন।

নতুন অধ্যাদেশে শক্তিশালী হবে কমিশন

খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন হলে ইউজিসির চেয়ে উচ্চশিক্ষা কমিশন শক্তিশালী হবে। কমিশনের কোনো সুপারিশ বা নির্দেশ যুক্তিসংগত সময়ে অনুসরণ ও প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ অর্থ স্থগিত করতে পারবে উচ্চশিক্ষা কমিশন।

পাশাপাশি ব্যর্থতার কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে কোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সের অনুমোদন বাতিল, স্থগিত বা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করাসহ উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে পারবে।

ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউজিসি বর্তমানে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। আশা করছি, উচ্চশিক্ষা কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং প্রকাশ বাধ্যতামূলক

নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রতি তিন বছর পরপর দেশের অনুমোদিত সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে র্যাংকিং প্রকাশ করবে। র্যাংকিং নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত মানদণ্ড নিরূপণ করবে কমিশন। ওই মানদণ্ডের ভিত্তিতে র্যাংকিং নির্ধারণ করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। এছাড়া মানোন্নয়নের জন্য র্যাংকিংয়ের নিচের সারিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তদারকির আওতায় আনবে।

নিয়োগ-পদোন্নতি-ভর্তিতে অভিন্ন নীতিমালা

উচ্চশিক্ষা কমিশনের খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি, পদোন্নয়ন ও চাকরি-সংক্রান্ত অভিন্ন বিধিমালা ও অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করবে উচ্চশিক্ষা কমিশন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি-সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন-কোর্স চালুর ক্ষমতা

বর্তমান বিধান অনুযায়ী—দেশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি এক্ষেত্রে শুধু পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তবে উচ্চশিক্ষা কমিশন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে দেবে।

উচ্চশিক্ষা কমিশন থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট, প্রোগ্রাম বা কোর্স চালু করার জন্য শর্তও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী না হলে তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এ কমিশন এর আগে যেসব কাজ করেছে, তা অনেক প্রশ্নবিদ্ধ। আবার অনেক কাজ ইচ্ছা থাকা সত্বেও করা সম্ভব হয়নি। সেসব বিষয় সামনে রেখে নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন হলে তা হবে যুগান্তকারী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলিফ রুদাবা বলেন, অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর মতামত নেওয়া হচ্ছে। এরপর অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ও কর্মশালা করা হবে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন ছাড়া এ অধ্যাদেশ পাস করার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

এএএইচ/ইএ/এমএস