লাইফস্টাইল

কেন তরুণীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বাড়ছে?

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের কারণে বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দিনের যেকোনো সময়েই হৃদ্‌পিণ্ডজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে করোনাকালের পর থেকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (এমআই) বা হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা দ্রুত বেড়েছে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে এখন আর নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই-সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে কম বয়সি প্রাপ্তবয়স্ক বা ইয়ং অ্যাডাল্টদের মধ্যে। বংশগত কারণ বা প্রচলিত ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান না থাকলেও হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটছে, যা চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলছে।

এই প্রেক্ষাপটে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর শ্রী জয়দেব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়োভাস্কুলার সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৮-৪৫ বছর বয়সীদের নিয়ে ‘প্রিম্যাচিওর হার্ট অ্যাটাক স্টাডি’ পরিচালনা করে। গবেষণার অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-করোনা আসার আগেই তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছিল।

প্রায় ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ধূমপানের মতো পরিচিত ঝুঁকি একেবারেই ছিল না। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মোট হার্ট অ্যাটাক রোগীর প্রায় ৮ শতাংশ ছিলেন তরুণী ও যুবতী। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সবাই কোনো না কোনো সময়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

যে কারণে তরুণীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বেড়েছেহাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিএন মঞ্জুনাথ জানান, কম বয়সি নারী রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি চিকিৎসকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। দুই-তিন দশক আগেও এমন চিত্র প্রায় দেখা যেত না। তার মতে, পারিবারিক ইতিহাসের পাশাপাশি জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তনই এর অন্যতম কারণ।

সাধারণত মেনোপজের আগে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে, যা হৃদ্‌রোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়। এ কারণেই কম বয়সে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে সেই সুরক্ষা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

লাইফস্টাইলের পরিবর্তন অন্যতম কারণপ্রবীণ কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. ধীমান কাহালি জানান, ধূমপান, মদ্যপান ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে পুরুষ ও নারীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে। এর প্রভাব পড়ছে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায়, যা অকাল হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে।

খাদ্যাভ্যাসে ফলে ঝুঁকি বেড়েছেচিকিৎসকদের মতে,এই উপমহাদেশের নারীদের মধ্যে জিনগত ও খাদ্যাভ্যাসগত কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। অতিরিক্ত ময়দা, ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। শীতকালে রক্তনালি সংকুচিত হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। যে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা-নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা-এসব অভ্যাস হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভূত হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতা ও জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তনই তরুণ বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হার্ট ইন্ডিয়া, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক, ফাস্ট ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন:শীতে গোসলে যে ভুল করলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি, সতর্কতা জরুরি 

এসএকেওয়াই/