আন্তর্জাতিক

‘নিরপরাধ মানুষদের’ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সেই ‘হিরো’

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বন্ডাই সমুদ্র সৈকতে ইহুদিদের একটি উৎসবে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় নিজের জীবন বাজি রেখে বহু মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন আহমেদ আল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি সে সময় একজন হামলাকারীর দিকে ছুটে গিয়ে তার কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়েছিলেন। সোমবার একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এই ‘হিরো’ সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে বলেছেন, তিনি ‘নিরপরাধ মানুষদের’ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।

সাজিদ আকরাম এবং নাভিদ আকরাম নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর সিডনির বন্ডাই বিচে হানুক্কা অনুষ্ঠান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সম্পর্কে তারা বাবা এবং ছেলে। ওই হামলায় ১৫ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী হামলা বলে বর্ণনা করেছে।

এই মর্মান্তিক হামলার সময় যারা এই দুই বন্দুকধারীর মারাত্মক তাণ্ডব থামানোর চেষ্টা করেছিলেন তাদের বীরত্বের গল্পও উঠে এসেছে।

তাদের মধ্যে আহমেদ আল আহমেদ একজন। তিনি একজন ফল বিক্রেতা। হামলার সময় পার্ক করা গাড়ির পেছন থেকে তিনি লাফিয়ে পড়েন এবং একজন হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেন। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে এবং সবার প্রশংসায় ভাসছেন আহমেদ।

নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন সবাই তাকে একজন প্রকৃত নায়ক বলে প্রশংসা করছেন। সোমবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে আহমেদ সিবিএস নিউজকে বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল কেবল তার কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়া এবং তাকে লোকজনকে হত্যা করা থেকে বিরত রাখা, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা থেকে বিরত রাখা ।

তিনি আরও বলেন, জানি আমি অনেক মানুষকে বাঁচিয়েছি, কিন্তু যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে। ঘটনার সময় আহমেদের কাঁধে বেশ কয়েকবার গুলি লাগে এবং বেশ কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

তিনি সেই মুহূর্তটির কথা স্মরণ করেন জানান, বন্দুকধারীর ওপর ‘ঝাঁপিয়ে পড়ে’ ডান হাত দিয়ে তাকে ধরে বলেছিলেন ‘তোমার বন্দুক ফেলে দাও, তুমি যা করছো তা বন্ধ করো’।

তিনি বলেন, আমি আমার সামনে মানুষ হত্যা দেখতে চাইনি, আমি রক্ত ​​দেখতে চাইনি, আমি তার বন্দুকের আওয়াজ শুনতে চাইনি। মানুষ চিৎকার করছিল এবং সাহায্য চাইছিল। গুলির ঘটনার সময় আহমেদ সমুদ্র সৈকতে বসে কফি খাচ্ছিলেন।

২০০৭ সালে সিরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন আহমেদ। তিনি দুই সন্তানের বাবা। তার চাচা মোহাম্মদ বলেন, তার কাজ আমাদের এবং সিরিয়ার জন্য গর্বের।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আহমেদের পরিবারের জন্য বেশ কয়েকটি ভিসা মঞ্জুর করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমরা যে সাহস এবং মূল্যবোধ চাই, আহমেদ তা করে দেখিয়েছেন।

বন্দুকধারীদের মধ্যে একজন ছিলেন ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম। হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। ভারতীয় এই নাগরিক ১৯৯৮ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন।

অপরদিকে তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তিনি সন্ত্রাসবাদ, হত্যার অভিযোগ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বোমা স্থাপনসহ ১৫টি অভিযোগে এখনো আটক রয়েছেন।

টিটিএন