অর্থনীতি

প্রবাসীদের কল্যাণে খালেদা জিয়ার যত উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস ও জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রবাসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুরক্ষা, কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।

প্রবাসী কর্মসংস্থান সম্প্রসারণে উদ্যোগ

বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ জোরদার করা হয়। শ্রমবাজার সম্প্রসারণে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়, যাতে নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময় দক্ষ ও অদক্ষ—উভয় ধরনের শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর হার বৃদ্ধি পায়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো

প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করা হয়। জনশক্তি রপ্তানি ও প্রবাসী কল্যাণ সংক্রান্ত দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়, যাতে বিদেশগামী কর্মীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ ও অভিযোগ নিষ্পত্তি সহজ হয়।

বিদেশে কর্মসংস্থানের আগে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে ভাষা, কাজের দক্ষতা ও মৌলিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের টিকে থাকতে সহায়ক হয়।

রেমিট্যান্স প্রবাহে গুরুত্ব ও প্রবাসীদের অধিকার

খালেদা জিয়ার শাসনামলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে পরিণত হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ শক্তিশালী হয় এবং অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসে।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কূটনৈতিক মিশনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, বেতন না পাওয়া বা আইনি সমস্যার ক্ষেত্রে দূতাবাসের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

প্রবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বীকৃতি

তার সরকারের সময় প্রবাসীদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। প্রবাসী আয়কে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নে এর প্রভাব স্বীকৃত হয়।

বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে প্রবাসী কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স খাতকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ের প্রবাসী কল্যাণ নীতির ভিত্তি তৈরি করে। সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ জোরদার এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে নীতিগত উদ্যোগ নেন, যা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।

ব্যাংক খাতে সংস্কার ও বেসরকারি ব্যাংকিংয়ের প্রসার

১৯৯১ সালে সরকার গঠনের পর বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেওয়া হয়। এই সময় নতুন বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ে, ফলে আর্থিক সেবার পরিধি বিস্তৃত হয়। ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

বীমা খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণখালেদা জিয়ার শাসনামলে বীমা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ে। এর ফলে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা খাতে নতুন কোম্পানি গড়ে ওঠে।বিশেষজ্ঞদের মতে, বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে গ্রাহকসেবা উন্নত হয় এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে।

শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে শেয়ারবাজারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যক্রম জোরদার করা হয় এবং বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ে।

২০০১-২০০৬ মেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হয়, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হয়।

তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যাপক বিকাশ:বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে তৈরি পোশাকশিল্প (RMG) দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়। রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে পোশাক খাতকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিশেষ করে শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এ খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে শুল্ক ও কর ছাড়ের পাশাপাশি বন্ড সুবিধা ও রপ্তানি প্রণোদনা দেন।

ইএআর/এমএমএআর/এএসএম