জাতীয়

প্রায় ৮৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন খালেদা জিয়া

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৫-০৬ অর্থবছরে তিনি সর্বমোট ২০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন। ক্ষমতায় আসীন থাকা অবস্থায় এটিই ছিলো তার জীবনের শেষ উন্নয়ন মূলক ব্যয়। খালেদা জিয়া তার শাসনামলে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন।

দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি এই অর্থ অনুমোদন করেছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন কর্মসংস্থানে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন, যাত্রী সুবিধায় বিমানবন্দরের পাশে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ আধুনিকায়নসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছিলেন দেশের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তিনি একনেক-এর চেয়ারপারসন ছিলেন না; বরং দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি একনেকের সভায় সভাপতিত্ব করতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী যিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতায় থাকার সময়ে দেশে প্রায় ৮৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন ও ভ্যাট আইনও তিনি পাস করেছিলেন। যার ওপর দিয়ে দেশ স্বনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সাহায্যনির্ভরতা থেকে অর্থনীতিকে বের করতে বাণিজ্য উদারীকরণ করেছেন বেগম জিয়া। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে চালু করেন ভ্যাট আইন। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেন। সব মিলিয়ে বেগম খালেদা জিয়া অর্থনীতির প্রথম সংস্কার করেন। সেটির সুফলও পেয়েছে দেশ। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নয়ন দর্শন এগিয়ে নিয়ে গেছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে মুক্ত বাজার সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রবর্তক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত।

কৃষকবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছিলেন খালেদা জিয়া

কৃষকদের জীবন মানোন্নয়নে কৃষি আধুনিকায়নে জোর দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০২-২০০৬ সালের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় একাধিক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সমন্বিত সয়াবিন চাষ প্রকল্প, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মুরাদনগর মুদ্রায়তন বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প, মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প (২য় পর্যায়), গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প, ইউনিট-২, ঠাকুরগাঁও, দক্ষিণ কুমিল্লা-উত্তর নোয়াখালী সমন্বিত নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প, বিনার গবেষণাগার আধুনিকীকরণ, সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য স্থাপনা সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন দেন তিনি।

এছাড়া সমন্বিত মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন, বরেন্দ্র প্রকল্পের ইউনিট-২ এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য আনয়নকল্পে বনায়ন, আলু বীজ প্রকল্প, সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারী কলেজ উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কৃষি তথ্য সার্ভিস শক্তিশালীকরণ, বিএসআরআই-এর গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়ন ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়া ও বিলে মৎস্য উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (২য় পর্যায়), উপকূলীয় চর বনায়ন প্রকল্প, কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় ইকো-পার্ক স্থাপন, বৃহত্তর যশোর জেলার জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক স্থাপন, মধুটিলা ইকো-পার্ক স্থাপন, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান, পল্লী কর্মসমূহে নিয়োজিত শ্রমের প্রাপ্তি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পও বেগম জিয়া অনুমোদন দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার শাসনামলে ভূ-উপরিস্থ পানির উদ্ভাবনমুখী ব্যবহার প্রকল্প, বৃহত্তর ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন, বৃহত্তর বগুড়া-রংপুর-দিনাজপুর সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষি প্রকৌশল প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান প্রকল্প, ঝিনাইদহ সদরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প, ডাল ও তৈল বীজ প্রকল্প, অধিক পরিমাণে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন প্রকল্প (২য় পর্যায়) অনুমোদন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে কন্দাল ফসলের গবেষণা কর্মসূচি জোরদারকরণ, তৈলবীজ গবেষণা কর্মসূচি জোরদারকরণ, কৃষিজাত পণ্যে পেস্টিসাইড রেসিডিউ-এর উপস্থিতি ও তার পরিমাণ নির্ধারণের জন্য পেস্টিসাইড টিক্সিকোলরী গবেষণা জোরদারকরণ, বাংলাদেশ সংকর (হাইব্রিড) ভুট্টা গবেষণাগার উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব গবেষণাগার ও গবেষণা শক্তিশালীকরণ, নরসিংদী, কুমিল্লা ও পটুয়াখালী জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব হাইব্রিড রাইস ইন বাংলাদেশ, পাট ও পাট জাতীয় দ্রব্যের বহুমুখী ব্যবহার ও সম্প্রাসারণ, সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনা সহায়তা প্রদান, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আবাসস্থল পুনরুদ্ধার প্রকল্প, স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প, বাগেরহাট জেলায় চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, অংশীদারিত্বমূলক পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের উন্নয়ন করেছিলেন তিনি।

এ ছাড়া, উপজেলা পশুসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র (ইউএলডিসি) স্থাপন, পশু পাখির টিকা, ওষুধ, প্রজনন সামগ্রী ও পশু খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, বৃহত্তর খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, বারির চলমান গবেষণা কর্মসূচি জোরদারকরণ, পশু পুষ্টি উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প, বাংলাদেশ এগ্রিবিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

গ্রামীণ এলাকায়ও বিশেষ নজর দেন বেগম জিয়া

পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ রাস্তায় ছোট ছোট (১২ মিটার দীর্ঘ পর্যন্ত) সেতু/কালভার্ট নির্মাণ, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে পোর্টেবল রিল ব্রিজ নির্মাণ, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে অপ্রধান শস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি, সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি, ২০০৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো নির্বাসন প্রকল্প, আঞ্চলিক সমবায় প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট নির্মাণ এবং নদী ভাঙনে বিলীন উপজেলা সমূহে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয় ২০০১-২০০৬ মেয়াদে।

নদী ভাঙন রোধেও প্রকল্প নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া

যমুনা নদীর ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর উপজেলাধীন বাহুরিয়া, সৈয়দপুর ও ফুলছড়ি উপজেলাধীন অক্তিপাড়া, ব্যাশিঘাট এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্প, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল শহরকে রক্ষার জন্য শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্প-৩, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নতুন প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ভারত কর্তৃক প্রস্তাবিত আন্তঃবেসিন নদী সংযোগের প্রভাব নিরুপন, মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে শাহাবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষা প্রকল্প (ভোলা জেলা), পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থেকে হুলারহাট পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলাধীন টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল এবং যারুরগাঁও বাজার রক্ষা প্রকল্প, সিলেট শহরের সুরমা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন উলিয়া বাজার যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প, ভোলা জেলাধীন লালমোহন উপজেলার অতিঝুঁকিপূর্ণ অংশে ভাঙনরোধে প্রকল্প নেওয়া হয়।

শিল্পেও বিশেষ নজর ছিল বেগম জিয়ার

বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), বগুড়া, রি-ফার্বিশমেন্ট অব এসেটস অব চিটাগাং ছিল মিলস অ্যান্ড আদমজী জুট মিলস ফর কনভার্টিং ইনটু ইপিজড, ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট স্থাপন, সার্ভে অব বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাট্রিজ টু আপডেট ডাটাবেইজ/এমআইএস অ্যান্ড অ্যাসেস দি রিকয়ারমেন্ট অব টেক্সটাইল টেকনোলজিস্ট অব ডিফারেন্ট লেভেল অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ খাতেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া

সঞ্চালন লাইনের সুবিধাসহ নতুন গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, ইমার্জেন্সি কনস্ট্রাকশন অব সাব-স্টেশন ফর গাওয়ার সিস্টেম অব ডেসা, তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, মোবারকপুর তেল/গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প, আশুগঞ্জে কম্প্রেসর স্টেশন স্থাপন, মনোহরদী-ধনুয়া, এলেঙ্গা-যমুনা সেতুর পূর্ব পাড় গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হয় খালেদা জিয়ার সময়ে। এছাড়া হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়ন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ট্রেনিং একাডেমি ভবন নির্মাণও করা হয় তার শাসনামলেই।

এমওএস/এমএমকে/এমএস