সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে জামায়াত কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, জামায়াতের পক্ষে যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব কেবল সেই পরিকল্পনাই জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং জাতির সহযোগিতা পেলে তা বাস্তবায়নও করা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের আয়োজনে ‘হ্যালো আওয়ার লিডার’ শীর্ষক সরাসরি মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, তরুণ ও যুব নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন।
জামায়াত আমির আরও বলেন, নাগরিকদের ভাবনা ও প্রত্যাশা জানার লক্ষ্যে জামায়াত এরই মধ্যে ‘জনতার ইশতেহার’ প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবনা, চিন্তা ও স্বপ্নসমূহ আমাদের চূড়ান্ত ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ইনশা আল্লাহ। তরুণদের ভাবনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে, যা বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ নেবে।
দেশের ‘জেনারেশন জি’ তথা ছাত্র ও যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রয়াত শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন এক সাহসী কণ্ঠ। তার আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশের জন্য তরুণদের দাঁড়াতে হবে এবং বলতে হবে- ‘আমিই হাদি’।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত তারুণ্য বয়সে নয়, মানসিক দৃঢ়তায়। সামান্য বাধায় পিছু হটা মানেই নেতৃত্বহীনতা। জামায়াতে ইসলামী এমন এক তারুণ্যের বাংলাদেশ গড়তে চায়, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিচল থাকবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের পর এ ভূখণ্ড দীর্ঘদিন শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করায় মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও এখনো একটি ইনসাফভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি।
ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করেছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাড়াও সাধারণ জনগণ নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিকে দমন করার চেষ্টাই সর্বশেষ গণ-অভ্যুত্থানের পথ তৈরি করে, যেখানে ছাত্র ও যুবসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
তিনি গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ছাত্র, যুবক ও শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক প্রয়াত শরিফ ওসমান হাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তার আত্মত্যাগ নতুন নেতৃত্ব ও সংগ্রামের প্রেরণা হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করে আমিরে জামায়াত বলেন, মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য তার লড়াই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারা।
আরএএস/এমআইএইচএস