সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শিকড় খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হয় উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী শহর দিনাজপুরে। জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার বহু আগে এই শহরেই কাটে তার শৈশব, কৈশোর এবং শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। রাজনীতির আলো-আঁধারির বাইরে দিনাজপুর তার স্মৃতিতে বিশেষভাবে জায়গা করে নেয় জন্মের শহর, বেড়ে ওঠার শহর হিসেবে।
১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। ছোটবেলায় আদরের নাম ছিল ‘পুতুল’। বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) দিনাজপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এজন্যই খালেদা জিয়ার শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কেটেছে দিনাজপুরে। তবে তার আদি পৈতৃকনিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ১৯১৯ সালে ফেনী থেকে জলপাইগুড়ি যান।
খালেদা জিয়ার শিক্ষাজীবন শুরু হয় দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে। প্রথম অক্ষর শেখা, প্রথম পাঠ, শিক্ষকদের স্নেহ- সবকিছুর ভিত্তি তৈরি হয় এই বিদ্যালয়েই। এরপর তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান দিনাজপুর বালিকা বিদ্যালয়ে, যা সেই সময়ের মেয়েদের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি কিছু সময় অধ্যয়ন করেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে, যা দিনাজপুর শহরের শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি।
এসব প্রতিষ্ঠান শুধু তার শিক্ষাজীবনের অংশ নয়- এগুলো তার ব্যক্তিত্ব, ভাবনা, নেতৃত্ববোধ ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
দিনাজপুরের পরিবেশও তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শান্ত রাস্তাঘাট, স্কুলের মাঠ, সহপাঠীদের হাসিমুখ- সব মিলিয়ে এই শহরে তার শৈশব ছিল স্বাভাবিক, সহজ আর মানবিক পরিবেশে ভরা। পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতির ব্যস্ততা ও জটিলতার ভিড়ে দিনাজপুর তার কাছে হয়ে ওঠে একরকম মানসিক আশ্রয়। শুরু দিনের স্মৃতির শহর।
দিনাজপুরবাসীর কাছেও খালেদা জিয়া ছিলেন নিজেদের এলাকার মেয়ে। রাজনীতিতে তার উত্থানের পরও মানুষ তাকে চিনত সেই পরিবার থেকে উঠে আসা এক পরিচিত কন্যা হিসেবে। তাদের এই আত্মিক টান দিনাজপুর ও খালেদা জিয়ার সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।
রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বাইরে জন্মভূমির প্রতি তার এই আবেগ আজও আলোচনায় আসে বিভিন্ন প্রসঙ্গে।
যদিও তিনি রাজনৈতিক জীবনে দিনাজপুর থেকে কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি, শহরটি তার পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে। কারণ এখানে তার জন্ম, এখানে তার শিক্ষা, এখানে তার চরিত্র গঠনের ভিত তৈরি। একজন মানুষের জীবনে শুরুর সেই পাঠশালা যে কতটা প্রভাব ফেলে, খালেদা জিয়ার জীবনে দিনাজপুর তা স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠা করে।
আজ তাকে কেন্দ্র করে যত রাজনৈতিক আলোচনা জোরালো হয়, দিনাজপুরের স্মৃতি তার ব্যক্তিগত পরিচিতির আরেকটি কোমল অধ্যায় হিসেবে সামনে আসে। তিনি শুধু জাতীয় নেত্রী নন, তিনি সেই শহরেরও সন্তান- যে শহর তাকে প্রথম দেখিয়েছে শেখার পথ। শিখিয়েছে মানুষের মুখ চিনে নেওয়ার বোধ এবং জীবনের প্রথম আলো। দিনাজপুর তাই খালেদা জিয়ার শিক্ষার শহর এবং সর্বোপরি তার শিকড়ের ঠিকানা।
এমডিএএ/কেএসআর