দেশজুড়ে

৫ দিনে ৩৩টি গরু-ছাগলের মৃত্যু

লালমনিরহাটে কালীগঞ্জের উপজেলার দক্ষিণ দলগ্রামের পশুরাম পাড়া নামক এলাকায় অজানা রোগে মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। গত ৫ দিনে প্রায় ৩৩টি গরু-ছাগল মারা গেছে সেখানে। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।একের পর এক গবাদি পশু মারা যাওয়ার ঘটনায় চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে কৃষক-কৃষাণীরা। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে অনেকেই আবার তাদের গবাদিপশুগুলো বিক্রি করার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠাচ্ছে।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, প্রায় তিন বছর থেকে মাঘ-ফাল্গুন মাসের দিকে তাদের গবাদিপশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এবছর তা প্রায় মহামারি আকার ধারণ করেছে।স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই কৃষক শাহজাহানের দুইটি গরু মারা যায়। এর কিছুক্ষণ পর ওই গ্রামের মমিনুর নামে অপর এক কষকের দুইটি গরু মারা যায়।বিষয়টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগকে জানানো হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিকভাবে ওই গ্রামের বেশকিছু গবাদিপশুকে টিকা দেয়া হয়।পরদিন শুক্রবার শাহজাহান আলীর আরও একটি গরু মারা যায়। আর প্রতিবেশী আকতারুজ্জামন হিরুসহ কয়েকজন কৃষকের বেশ কটি গরু ছাগল মারা যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত ওই পাড়ায় মোট ১৯ টি গরু ও ১৪ টি ছাগল মারা যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই কৃষক শাহজাহান আলীর দুটি গরুর পেছনের পায়ের কাঁপনি শুরু হয়। এরপর পেট ফুলে উঠে মাটিতে পরে গিয়ে গোটা শরীর কাঁপতে থাকে গরু দুটি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর গরু দুটির মৃত্যু হয়। একই অবস্থা ছাগলের মৃত্যুর বেলাও ঘটে বলে জানায় কৃষকরা।তবে অজনা ওই রোগে আক্রান্তের পর প্রায় দেড় ঘন্টা পর্যন্ত গরু বেঁচে থাকলেও ছাগলের বেলায় ১০ মিনিটও সময় পাওয়া যায় না। কারণ আক্রান্তের ১০-১১ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ছাগালগুলো।কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমার তিনটি গরু ও দুইটি ছাগল মারা যাওয়ার পর নিঃস্ব হয়ে গেছি। এতবড় ক্ষতি এখন কী করে পুরণ হবে? তা ভেবে পাচ্ছি না।ওই গ্রামের কৃষক নুরভক্ত বলেন, আমার দুইটি ছাগল মারা গেছে। তাই বাকি তিনটি গরু ও দুইটি ছাগল শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছি। সাজু মিয়া তার ৪টি গরু আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভাষ্য মতে, ২০১৫ সালে ঠিক এই সময়ে (মাঘ-ফাল্গুন মাস) একইভাবে চারটি গরু দুইটি ছাগল, ২০১৬ সালে তিনটি গরু চারটি ছাগল মারা যায়।কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় কিছু গরু ছাগল মারা গেছে। এর আগের বছরও মারা গেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি সমাধানে আমরা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছি।এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পাদ কর্মকর্তা ডা. এএসএম নাসিরুদ্দিন খাঁন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এটিকে ফুড পয়জনিং (খাদ্যে বিষক্রিয়া) বলে  মনে হচ্ছে। এর পরেও আক্রান্ত গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে ঠিক কারণে এমনটি হচ্ছে।রবিউল হাসান/এএম/পিআর