সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্রী নন্দন কান্তি ধরসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই ব্যবসায়ী।
শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মুর্শেদ আলম সাদ্দাম এ অভিযোগ করেন।
সাদ্দাম সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং উপজেলা যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সাবেক সদস্য।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্রী নন্দন কান্তি ধর, এসআই (উপ-পরিদর্শক) তপন দাস, এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন ১৯৭/২০১৭ নং মামলায় একটি নির্ধারিত তারিখ মিস হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত হতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল গত ৮ মে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় কলাগাও বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে আমাকে গ্রেফতার করে টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান।
সেখানে গ্রিলের সঙ্গে আমার বাম হাত হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে এসআই তপন হাতে পুলিশের ব্যবহৃত বেতের লাঠি নিয়া “ছাত্রলীগের মারে ...” বলিয়া আমার পিটে ও দুই উরুতে অন্তত ২৫টি বেত্রাঘাত করেন।
দ্বিতীয় দফায় এএসআই পীযুষ, তৃতীয় দফায় কন্সস্টেবল ইসমাইল অনুরুপভাবে একই লাঠি দ্বারা আমাকে বেদম মারপিঠ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম করেন। ওইদিন রাত এশার নামাজের সময় এসআই তপন আমাকে তাহিরপুর থানা হাজতে নিয়ে আটক রাখেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, এ সময় ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেন,“এই শ্যালার পুতরে ফোলা জখম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্টে চালান দেয়া ঠিক হবে না। সুযোগ পাইলেই শ্যালার পুত মামলা কইরা দিবো” বলে আমাকে আদালতে না পাটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে রাত্রে থানা হাজতে আটকে রাখেন। আমি অনুনয় বিনয় করার পরও তারা আমাকে প্রথম দিন আদালতে প্রেরন করেননি।
পরে ওসি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ডাক্তারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ আনিয়ে এসআই তপনের দ্বারা আমার পিঠে মলম লাগান এবং আমাকে টেবলেট খাওয়ান। উক্ত ব্যবস্থাপত্রটি বিজ্ঞ আদালতে সংশ্লিষ্ট মামলার নথীতে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাবির আহমেদ জাবেদ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বিপ্লব (বাবু), যুবলীগ নেতা সেলিম ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আছে। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইন অনুযায়ীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজু আহমেদ রমজান/আরএআর/পিআর