আইন-আদালত

আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ খালাস ৪৫ জন

পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ৪৫ জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অন্যদিকে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। মৃত্যুদণ্ড থেকে চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬০ আসামিদের মধ্যে আরও ১২ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

এ ছাড়া নিম্ন আদালতে ২৫৬ জন বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ২৯ জনকে দণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড থেকে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

আবার নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে হাইকোর্ট ৩১ জনকে যাবজ্জীবন এবং চারজনের সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।

নারকীয় এই হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে দুজন রাজনীতিবিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী আজকের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। অপর রাজনীতিবিদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মরহুম নাসির উদ্দিন আহমেদ (পিন্টু) কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান।

সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। আদালত এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে রায়ে বিভিন্ন সুপারিশও করেছেন আদালত। উল্লেখ্য, নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ছয়জন আসামি মারা গেছেন।

হাইকোর্টে যারা খালাস পেলেন১৫২ জন বিচারিক আদালতের ফাঁসির দণ্ড পেলেও আপিল করলে হাইকোর্ট চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তারা হলেন হাবিলদার খায়রুল আলম, নায়েব সুবেদার মো. আলী, হাবিলদার বিল্লাল হোসেন খান ও সিপাহি মেজবাহ উদ্দিন। ফাঁসির আসামি ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

১৬০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে হাইকোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী, ডিএডি মো. সিরাজুল ইসলাম, সিপাহি শাহিদুল ইসলাম, নায়েব সুবেদার আলা উদ্দিন, ঝাড়ুদার আমাদুল হক, রাশেদ আলী খোকা, মো. আলম, মানিক চন্দ্র, আলমগীর হোসেন, হাবিলদার কামাল উদ্দিন, সিপাহি সাইদুল ইসলাম ও সিপাহি আতিকুর রহমান। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত যে দুজন আসামি মারা গেছেন তারা হলেন- বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু। ২০১৫ সালের ৩ মে তিনি মারা যান। আর সিপাহি শফিকুল ইসলাম মারা যান ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।

বিভিন্ন মেয়াদে বিচারিক আদালতে কারাদণ্ড পাওয়া ২৫৬ জন আসামিদের মধ্যে খালাস পেয়েছেন ২৯ জন। তারা হলেন ল্যান্স নায়েক মনজরুল ইসলাম, সিপাহি হামিদুল ইসলাম, ঝাড়ুদার আবদুল মাজেদ, নায়েব সুবেদার আবদুল কাদের, সিপাহি শাহ জালাল শিকদার, সিপাহি আবদুল মতিন, ল্যান্স নায়েক সাদেক আলী, সিপাহি শাহাব উদ্দিন, পাচক আমিরুল ইসলাম, সিপাহি শেখ ফরিদ, সিপাহি ইন্তাজ আলী, সিপাহি সরোয়ার হোসেন, হাবিলদার বাবুল ইসলাম, সিপাহি আবুল কালাম, সিপাহি রাকিবুল ইসলাম লিমন, সিপাহি মো. শফিকুল ইসলাম, হাবিলদার আবদুল বারিক, সিপাহি মাহবুবুল আলম, সিপাহি আজাজুল হক রাহী, নায়েক মো. ওয়াজেদ আলী, সিপাহি আনিসুর রহমান, হাবিলদার খন্দকার পনির উদ্দিন, কার্পেন্টার শামসুল হক, সিপাহি শেখর প্রসাদ চৌধুরী, সিপাহি মো. আরাফাত হোসেন, সিপাহি মোকাররম হোসেন, সিপাহি জিয়াউল হক ও সিপাহি কামরুল হাসান (পলাতক)।

২৮ জন বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট কোনো আপিল করেনি। হাইকোর্টে ১০ বছর কারাদণ্ড পেয়েছেন ১৮২ জন। দুজনের ১৩ বছর, আটজনের সাত বছর, চারজনের তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। মারা গেছেন তিনজন। তারা হলেন জেসিও সুবেদার আবদুল কাইয়ুম। তিনি ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট মারা যান। আর জেসিও নায়েব সুবেদার শাহিদুল ইসলাম ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর এবং ল্যান্স নায়েক আবদুল বারেক মারা যান ২০১৬ সালের ২৫ মে।

ফাঁসির দণ্ড থেকে কমে যাবজ্জীবনমৃত্যুদণ্ড থেকে কমে আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন ল্যান্স নায়েক মো. শাহ আলম, এমএলএসএস সাইফ উদ্দিন মিয়া, সিপাহি মো. রমজান আলী, ল্যান্স নায়েক মো. মোজাম্মেল হক, নায়েব সুবেদার (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট) মনোরঞ্জন সরকার, নায়েব আলী হোসেন, সিপাহি কামরুল হাসান ও সিপাহি মো. সেলিম।

বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এদের মধ্যে থেকে খালাস ৩১ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ৩১ জন আসামি হলেন সিপাহি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, নায়েক মাহবুবুল আলশ, নায়েক তারেকুল ইসলাম, সিপাহি মো. মেহেদী হাসান, হাবিলদার মো. নুরুল আমিন, জেসিও নায়েব সুবেদার মো. ইদ্রিম মিয়া, সিপাহি মো. হাবিবুর রহমান, ল্যান্স নায়েক রাজকুমার পাল, জেসিও নায়েব সুবেদার সনথ মালাকার, সিপাহি নুর আলম সরকার, সিপাহি মো. আলী আকবর, সিপাহি মো. শফিউল আযিম, সিপাহি মো. শাহনুর রহমান, হাবিলদার মো. নুরুল হক, ল্যান্স নায়েক মো. হারুন, নায়েক মো. গুলজার হোসেন, সিপাহি মো. শামসুল হক, সিপাহি আবদুস শহীদ, সিপাহি হাসান আলী, সিপাহি মো. কাওসার আহমেদ, সিপাহি ও মো. ফারুক আহমেদ, ল্যান্স নায়েক মো. জহুরুল ইসলাম, সিপাহি মো. মোস্তফা কামাল, সিপাহি মো. মাহবুবুল আলম, সিপাহি গাজী মাশুদুল হক, সিপাহি মো. আবদুল খালেক, সিপাহি মো. বাকী বিল্লাহ, ল্যান্স নায়েক মো. আবদুল আজিজ, সিপাহি মো. মফিজুর রহমান, হাবিলদার শেখ আবদুর রশীদ, কুক আমিন মোল্লাহ।

এ ছাড়া খালাস পাওয়া চারজনের সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন হাবিলদার জেসিও নায়েব সুবেদার সনথ মালাকার, নায়েক মুক্তার হোসেন, সিপাহি মো. আলমগীর কবীর ও মো. জিয়া উদ্দিন বাবলু।

এফএইচ/বিএ