রাজনীতি

সম্পদে এগিয়ে নোমান, ঋণ আর মামলায় আসলাম

 

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আসলাম চৌধুরীর মতো বিএনপির অধিকাংশ হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও টিকে গেছেন নোমান, খসরু ও শাহাদাত। নির্বাচন কমিশনে তাদের দাখিল করা হলফনামা থেকে জানা গেছে, বিএনপি নেতাদের মধ্যে গত দশ বছরে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান। বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৭০টি মামলা ও ৪৮৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৯ টাকা ঋণখেলাপি হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের বর্তমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২৪ কোটি ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯০ টাকা। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার হলফনামায় মোট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন এক কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৩ টাকা। সে হিসাবে গত দশ বছরে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২১ গুণ। সম্পত্তির সঙ্গে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে তার। বর্তমানে তার মামলা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে।

তিনি অস্থাবর সম্পত্তির হিসাবে শুধু ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিকে ঋণ দিয়েছেন ১১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাছাড়া স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ২৬ কোটি ৬২ লাখ ২৬ হাজার ৮৪৮ টাকা। এ হিসাবে এই দম্পতির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৫০ কোটি ৯৪ লাখ ১ হাজার ৭৩৮ টাকা।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। কিন্তু ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও এখন ৭২টি মামলা নিয়ে কারাগারে আছেন তিনি। আয়কর নথি অনুযায়ী, তার সম্পদও আগের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়লেও ব্যাংক ঋণ তার চাইতেও বেশি।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, রাইজিং গ্রুপের মালিক আসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ৩৭৯ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৫ টাকার। এই দম্পতির শুধু অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ ৩৩৩ কোটি ৬০ লাখ চার হাজার ৮৪৫ টাকা। ২০০৮ সালের তুলনায় তাদের সম্পত্তির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অথচ এই বিএনপি নেতার নামে পাঁচটি ব্যাংকে ৩৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৯ টাকা ঋণ রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে রয়েছে আরও ১৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ।

এদিকে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে ৪০টি। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন তিনি।

এবার তার প্রথম প্রথম নির্বাচন হলেও আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের তুলনায় তারও সম্পদ বেড়েছে। শাহাদাত এবার তার নগদ টাকাসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৩০ লাখ ১৪ হাজার ৬০৬ টাকা। তিনি শুধু তার ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে দেখিয়েছেন ৪ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর হাতে থাকা নগদসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৫৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৬৬ টাকা। এই হিসাবে এ দম্পতির নগদ টাকাসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ টাকা।

চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার বিরুদ্ধেও মামলা আছে ১৪টি।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক এই সভাপতির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৩ টাকা। অন্যদিকে তার স্ত্রীর এবার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫১ হাজার ৯০১ টাকা। এ হিসাবে বিএনপির এই হেভিওয়েট প্রার্থী ও তার স্ত্রীর মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪ টাকা।

সে হিসাবে ২০০৮ সালের তুলনায় এবার খসরুর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৩ টাকা।

এসআর/এমকেএইচ