অভাবের সংসারে একটু একটু করে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরছিল। ছেলের বিয়ে দেয়ারও তোড়জোড় শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে পুরো পরিবার শোকাস্তব্ধ। কেননা তাদের পরিবারের সবেধন নীলমণি যে আর নেই। বৃহস্পতিবার কাশ্মিরের জঙ্গি হামলায় যে ৪০ জন জওয়ান নিহত হয়েছেন তাদের একজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার সুদীপ বিশ্বাস।
নদীয়ার পলাশিপাড়া থানার হাঁসপুখুরিয়ায় তিলিপাড়ার বাসিন্দা সুদীপ বিশ্বাস। সুদীপরা এক ভাই ও এক বোন। বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস নিজেদের অল্প জমিতে চাষাবাদ করেন। সব মিলিয়ে অভাবের সংসার। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, চার বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সুদীপ। তার রোজগারে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল একটু একটু করে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর গ্রামে নিজেদের ইটের বাড়ি তৈরি শুরু করেন সুদীপ। তাছাড়া চাকরি পাওয়ার পর একমাত্র বোনের বিয়েও দেন তিনি।
আরও পড়ুন>> পাকিস্তানকে পুরোপুরি একঘরে করবে ভারত
ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৫৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন সুদীপ বিশ্বাস। তার পোস্টিং ছিল কাশ্মীরের পুলওয়ামায়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে গ্রামে আসেন সুদীপ। বাড়িতে বেশ কয়েকদিন ছিলেন। ছুটি শেষ হওয়ার পর যখন কর্মস্থলে ফিরে যান সুদীপ, তখনো তার পরিবার টের পায়নি যে, তাদের ছেলে আর ফিরবে না।
গতবার যখন বাড়িতে আসেন সুদীপ তখর তার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হয়। তার জন্য পাত্রী দেখাও শুরু হয়। আসছে ছুটিতে বাড়ি আসলে তার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে কথা বলবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না সুদীপের পরিবারের মানুষজন। এমন আঘাতের জন্য যে তারা প্রস্তুত ছিলেন না।
আরও পড়ুন>> আপনারা যখন এই ভিডিও দেখবেন তখন আমি জান্নাতে থাকব
বৃহস্পতিবার সকালে সহকর্মীদের সঙ্গে গাড়িতে করে পুলওয়ামার টহলদারিতে যান সুদীপ। জম্মু-শ্রীনগরে মহাসড়কে আইইডি বিষ্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা করে জঙ্গিরা। তিনি তার অন্তত ৩৯ জন সহকর্মীর সঙ্গে নিহত হন।
শুক্রবার সকালে সেনা হাসপাতাল থেকে ফোন পান নিহতের ভগ্নীপতি। খবর শুনে কান্নার রোল পড়ে বাড়িতে। সুদীপ বিশ্বাসের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামের সবাই যেন শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
এসএ/এমকেএইচ