দেশজুড়ে

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গাইবান্ধায় পানির হাহাকার

এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরের জেলা গাইবান্ধা। কিছুদিন আগেও জেলার আনাচে কানাচে ছিল পানিতে টইটুম্বুর। এমনকি জেলা শহরের রাস্তাঘাটও ছিল পানিতে ডোবা। অথচ এক মাস পরেই পানির হাহাকার শুরু হয়েছে এ জেলায়। ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি।

পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় ইঞ্জিনচালিত শ্যালোমেশিন ও বৈদুতিক পাম্প দিয়ে প্রতি ঘণ্টা ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় ফসলে পানি দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ শেষে ধান বিক্রি করে বিঘা প্রতি কি পরিমাণ লোকসান গুনতে হবে তার হিসাব মিলবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। একে তো ধানের দাম কম, তার উপর আবার রোদের তীব্রতায় মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। এসব কারণে অনেক চাষি আমনের চাষ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সোনাই ডাংগা গ্রামের কৃষক ওয়াহেদুল ইসলাম ধার দেনা করে চরা দামে ৫ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করে মহাবিপদে পরেছেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে বৃষ্টির পানিতেই আমনের আবাদ হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। টানা এক মাসেও এ উপজেলায় তেমন কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় ১০০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে পানি সেচ দিয়ে আমনের আবাদ করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, চরা দামে আমন ধানের চারা কিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ঘণ্টা পানি সেচ দিয়ে যে পরিমাণ ধান হবে তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলা সম্ভব না। তাই ৩ বিঘা জমি তিনি ফেলে রেখেছেন।

এই ইউনিয়নের তেতুলতলী গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিনের জানান, পানির অভাবে বৃষ্টির পানে চেয়ে থেকে জমি ফেটে চৌচির অবস্থা। তাই ৭০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে ইঞ্জিনচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হচ্ছে।

সাঘাটা উপজেলার তেলিয়ান গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, চার মণ ধান বিক্রি করে এক পোন আমন ধানের চারা কিনে জমিতে রোপন করে কি লাভ হলো? ধার দেনা করে কৃষাণ, সার, কৃটনাশক ওষুধ দিয়ে এখন প্রতিদিন সকাল-বিকেল দেড় থেকে ২ ঘণ্টা জমিতে পানি দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তার মতো শত শত কৃষক এ বছর আমনের আবাদ করে প্রকৃতির বিরুপ আচরণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

একই চিত্র গাইবান্ধার ৭ উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের। পলাশবাড়ীর হরিনাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার কৃষক বন্যার পানি শুকিয়ে গেলেও এখনও আমনের চাষ করেননি পানির অভাবে। এছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কৃষকরা চরা দামে আমনের চারা কিনে আবাদ করে সেচ দিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ টানা বৃষ্টিতে আগামীতে বন্যার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই বন্যার শঙ্কায় কৃষকরা মনোযোগ দিয়ে নিম্নাঞ্চলের জমিগুলোতে বেশি খরচে সেচ দিতে আমনের চাষ করার সাহস পাচ্ছেন না।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ফেরদৌস জাগো নিউজকে জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় মোট ৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি লাঘব করতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমনের বীজ দেয়া হচ্ছে। এ বছর এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্র পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কৃষকদের আগ্রহ থাকার ফলে আমরা আশাবাদী আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো।

আবহাওয়ার বিষয়ে বগুড়া আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসাইনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, বঙ্গপোসাগরে লঘুচাপের ফলে বগুড়া, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে । গাইবান্ধাতেও যে কোনো সময় বৃষ্টিপাত হতে পারে । জাহিদ খন্দকার/এমএএস/পিআর