যাত্রা শুরু ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি। একরকম শখ করেই ব্যবসায় আসেন ঢাকার মেয়ে শেখ জান্নাতুল ফিরদাউস নির্ঝর। ফেসবুক পেজ ‘ডিজাইনার প্রমিজ’র যাত্রাটা কেবল তখন শুরু। তিনি শখের বশে শুরু করলেও কিছুদিন পর খুব দ্রুত অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তবে পরিবার থেকে কোনোরকম উৎসাহ না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এ নবীন উদ্যোক্তা।
পরিবারের ধারণা, মেয়েরা কোনোরকম অভাব ছাড়া কেন ব্যবসা করবে! মেয়ের এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছিলেন না পরিবারের অন্যরা। পরিবারের সদস্যরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও স্বামী ডা. আহাদ নাজমুল হাসানের সহযোগিতা তাকে লক্ষ্যে স্থির রেখেছিল। পেশায় বিসিএস চিকিৎসক হয়েও স্ত্রীর উদ্যোক্তা জীবনকে বিকশিত করতে নিয়মিত সাহায্য করেছেন তিনি।
দেশি, পাকিস্তানি এবং ভারতীয় পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দেশি পণ্যের চাহিদা তাকে বেশি আগ্রহী করে তোলে। নির্ঝরের ইচ্ছা, নিজের পণ্যের মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। আয়ের অন্তত ৯০ ভাগ এতিম, দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের পেছনে ব্যয় করেন। তাদের জীবিকার মাধ্যম করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন এ সাহসী নারী।
অনলাইন ব্যবসায় উই প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশাকে আইডল মনে করেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম বর্ষে পড়ার সময় এলিগ্যান্ট মেকওভারের সামিনা সারাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যবসা শুরু করেন এ উদ্যোক্তা। নিজের ব্যবসা, বয়স এবং পরিবারের বাধা পেরিয়ে অন্তত ৯৮ ভাগ সফল হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।
শুধু উইতে লাখ টাকার উপর সেল হওয়ায় লাখপতি ক্রেস্টও পেয়েছেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে এক্সপোর্ট করছেন। তার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ ছাড়াও আয়ের টাকার অধিকাংশ এতিম বাচ্চাদের পড়ার খরচ, অসহায় ও অভাবি মানুষের জন্য ব্যয় করায় নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে মনে করেন।
প্রথম প্রথম ডেলিভারি ম্যানকে প্রোডাক্ট দিয়ে পাঠাতে এক অজানা ভয় কাজ করতো। সব ডেলিভারি ম্যানকে বিশ্বাস যেমন করা যায় না; তেমনি কিছু কাস্টমারও নিজেদের দোষ ডেলিভারি ম্যানের ওপর চাপিয়ে দেন। তবে ব্যবসা শুরুর ২ মাস পর থেকে উই গ্রুপ থেকে বিশ্বস্ত ডেলিভারি ব্যবস্থা পাওয়ায় আর কোনো বেগ পেতে হয়নি।
নিজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করেন। যার মধ্যে অধ্যবসায়, কাজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা, ঝুঁকি গ্রহণ, লক্ষ্য নির্ধারণ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পরিচালনা এবং আত্মবিশ্বাস সব সময় গুরুত্ব পায় নির্ঝরের কাছে।
নারীদের যাবতীয় ড্রেস, ব্রাইডাল ড্রেস, বেবি ড্রেস কিংবা ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, বেডশিট, হোমডেকোর প্রোডাক্ট, জুয়েলারি, ওড়না, হিজাব সবই পাওয়া যায় তার ই-কমার্স সাইটে। একটি বড় স্বপ্নের লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ৫ বছর পর যখন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করবেন; তখন সেখানে নিজস্ব জায়গায় শো-রুম করার ইচ্ছা আছে তার।
তিনি দেশীয় পোশাকের বিভিন্ন ফিউশনকে তুলে ধরতে চান। নিজের মানদণ্ড হিসেবে নিজেকেই তুলে ধরতে চান এ উদ্যোক্তা। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২য় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বর্তমানে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে অধ্যয়ন করছেন। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তিনি কাউকে বিশেষ কোনো টিপস দিতে চান না বরং বলছেন সাহস রেখে এগিয়ে যেতে।
এসইউ/এএসএম