১পরম্পরা
আগামীকালের জন্য প্রতিদিন যেন বেঁচে থাকা সময় আমাকে নিত্য নিয়ে যায় জীবনের কাছেসঞ্জীবন দেখে নিই বারে বারে ফেরা নদী তীরেপ্রতিটি ভোরের কাছে পাই আমি নির্বিবাদ আলোসময়ের পেন্ডুলামে দোলে যেন আশার স্বপ্নেরাতখন এগিয়ে নেয় প্রজন্মকে আকাঙ্ক্ষার পথে॥
২০ জুলাই, ২০২১ঢাকা।
২.জীবনের সহজ গণিত(রক্তের বন্ধনের প্রতি)
বসে আছি, তোমারই চলনের একাপথ দেখিতুমি শুধু চলে যাও, যাও ওই স্বপনের দিকেআমি চেয়ে থাকি দূরে, দুইচোখে আকাশের নীলতবে সুখ বুঝি নাই, বুঝি মায়া, রক্তের বন্ধন,যতদূরে যাও মায়া টানে পিছে - দরিয়ার পাড়েযেখানে জীবন থাকে জীবনের মতো সূর্যমুখিতুমি এইসব দেখে চিনেছিলে কঠিন সংসারউপহার পেতে পেতে বোঝ নাই ঠিক মূল্য তার।
তুমি যতদূর যাও, পাও দেখা তার সাবলীলতবে তার পরিচয় তুমি জানো নাই কোনোদিন!সমতল নয় এত, যত ভাবো সুরক্ষার মাটিবন্ধুরতা একপাশে রেখে রেখে যেতে হয় পথমেঘ বিলি কেটে যাও সহজেই আকাশের মাঝেতবে চ্যালেঞ্জের মেঘ কাটা এত সহজ তো নয়মনে রেখো এবং মনে রাখতেই হয় কিছু কিছুযোগ বিয়োগের সাথে আরো কিছু সহজ গণিত।
০৮ জুলাই, ২০২১ঢাকা।
৩.আমি আগে মানুষ অতপর বাঙালি
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আজ, আমি কোনো ভিন্ন প্রজাতিররঙ মাখা কিছু নই,তবু যেন কী দিয়ে রাঙালি?আমি সর্বাগ্রে মানুষ, অতপর গর্বিত বাঙালি।আমি কোনো দেবতার স্বপ্নসৃষ্ট বরপুত্র নই,আমি ছিলাম বাঙালি,চিরকাল সেই বাঙালির উত্তরাধিকারী হই।আমি খেলি - মাটির উঠোনে,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আরো যে, আমার পূর্ব-পুরুষের কেউ ভিন্ন গ্রহ থেকে ফাঁকি দিয়ে আসেনি এখানে।
নয় কোনো কৃপা - নয় দয়া জানি,অধিকার খাঁটি, এই আমিও মানুষ মানুষের ঘরে - জন্মান্তরে,নিয়মের সাক্ষী আছে আমার মা,আরো আছে মাটি,এবং জনকের ঘাম, তারপর মায়ের ঋণ যা,যখন আমার কান্না শুনেছিল - চিৎকারে প্রথমপৃথিবীর মানুষেরা সেই থেকে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতছিল সকলে সহসা ক্ষণিকের নিষ্ঠ অভ্যাগত!
আমি শপথ করিনি কখনও, বলি আজ বটে, শপথের সুরে সুরে - এই মাটি স্বদেশ আমার,শরীর যতই থাক যত দূরে, কপালে আমার বাঙালির নাম লেখা - স্বীকৃতির চিহ্ন অকপটে।
ইতিহাস শুনে কেউ কেউ হয়অবাক বিস্ময়ধার দেনা করি নাই দাম দিয়ে কিনেছি নিশ্চয়,রক্তের মাটিতে লাল সবুজেরউড়েছে নিশানরক্তের দামের হয় কি তুলনা?রুখেছি তুফান।
আমি সেই বাঙালির একজন হয়ে সারা বিশ্বঘুরেছি, দেখেছি কত মানুষ যে করেছে কুর্নিশ,আমি সেই বাঙালি যে মাথা উঁচু রাখে অহর্নিশ।
সত্যি আছে চন্দ্র-সূর্য আর মেঘে দিগন্তের নীলআমার গাঙ্গের পারে ওড়ে রঙ বেরঙের চিলতাদের সঙ্গেই করি বসবাস সকাল বিকালনদী পাখি সবুজের সঙ্গে আমি থাকি চিরকাল।আগে জন্মেছি মানুষ হয়ে তারপরে পরিচয়আমি ‘বাঙালি’ - এটাই জীবনের অনিবার্য জয়॥
১২ জুলাই, ২০২১ঢাকা।
৪.সমুদ্দুরের সঙ্গে মিশ্যা যাই
হেই খোদা!যহন তহন যন্ত্রণা পাইলেকইলজার মইদ্যে দাগ লাইগ্যা যায়,কইলজার ওতো এট্টা সহনের ক্ষ্যামতা থাহন লাগে,তুমি হেইয়া বুঝ না ক্যান, খোদা?
অহন তো বাইন্দা রাখছো ঘরের মইদ্যেআহ্ হা রে! হেই কবেত্তুন ঘরের বিতরে আছি!হেই কবে মাইনসের এট্টুহানি সুক সুক মুখ দ্যাখছেলাম, ভুইল্যা গেছি!!
হেই ছোডোকালে যহন অবুঝ আছিলামতহন তো মাইনসের হাসন দেইখ্যা সুকটাও বুঝতাম,আমার মনের মইদ্যে পুরান কতা গুলাইন জাইগ্যা ওঠেআমার বাবার মুখের হাসন আছিল ইদের চাঁন্দের লাহান আর মার ঠোঁডে আছিল পানের রসে রাঙা সুক,আহ্ হা রে! কী সোন্দর ... কী সোন্দর সুক!আমি জীবনে এমোন সুক আর দেহি নাই!!!
তয় আমি দুঃখও দেহেছি, ম্যালা দুঃখ ... দুঃখের বিছান,এই যেমন শাওন মাসের হেই ভাসাইন্না বর্ষা আইলে তহন সব মাইনসের সুক ভাইস্যা যাইত ঢলের পানিতে,আর অহন?অহন তো আর বর্ষা লাগে না, পানিও লাগে না,হুকনা মাটির উপুর দিয়াই যেনো গড়-গড় কইরা মাইনসের সব সুকের ইচ্ছা গুলাইন দূরে চইল্যা যায়,অহন ক্যাবল বেহান-বিয়ালে অন্য রহমের দৃশ্য দেহিআর খালি চাইয়া চাইয়া দেহি,তহন আমার চোখ দিয়া টপ্ টপ্ - টপ্ টপ্ কইরা বর্ষা নাইম্যা আহে,আমার না ... কিচ্ছু ভাল্লাগে না, এট্টুও ভাল্লাগে না,আমি কী হরুম? কও দেহি খোদা! এট্টুহানি কও!!
জানো, আমি যেই বস্তিডাতে থাহি,হেইডার কাছে বড় একহান গোরস্তান আছেঅহন পত্তিডা দিন খালি ঘন ঘন লাশ আহেশাদা কাপড়ে মোড়াইন্যা লাশ ... কত্ত কত্ত লাশ!গোর খোদকরা যারা আছে, হেরা মোডে বিশ্রাম পায় নাখালি কবর খোঁড়ে, খালি কবর খোঁড়ে, আর কবর দ্যায়আমারও খালি মনে অয় কী ...জানো?এই বুঝি আমারেও শাদা কাপড়ে মোড়াইয়া দিব!!
আমি মাইনসের বাসায় বাসায় কামকাইজ কইরা খাইহেইয়াও অহন আমারে হেগো ঘরে ডুকতে দেয় নাআমি কই-কী ? আমার নাকমুক শক্ত কইরা বাইন্দা নিমু,তয় কন দিহি কি অসুবিদা?হেইয়াও রাজি অয় না।
আমার সোয়ামি ওড়া-কোদাল, দাও-দড়ি বোগলে লইয়াপত্তি দিন কামলা-বাজারে যাইয়া বইয়া থাহেকিন্তু কেউ হেরে কামে নেয় না, কাম দেয় না,তয় খোদা! তুমি কও দিহি -পেডের উপুর কি ভিজা গামছা বাইন্দা থুইলে খিদা মজে?নাকি কইলজা ভিজে?ভিজে না খোদা, ভিজে না! মোডেও ভিজে না।তুমি ক্যান হেইয়া বুঝ না, খোদা?
এক ঝিলিক ঠাডার লাহান এট্টা কিছু যদি অহন পড়তো,যদি মাথায় আইস্যা পড়তো, তাইলে - এট্টুহানি দেইখ্যা নিতাম খোদা!তোমার শান্তির জায়গা কোনডা?
সাদে কী কই? যহন তহন যন্ত্রণা পাইলেকইলজার মইদ্যে দাগ লাইগ্যা যায়,কইলজার ওতো সহনের এট্টু ক্ষ্যামতা থাহন লাগে, নাকি?তয় যন্ত্রণা দিলে কি তোমার মনডা শান্তি পায়, খোদা!যদি হাচাই শান্তি পায়, তয় আমার কইলজাডারে লইয়া যাও গিয়া হ্যাষে ভাসান নাওয়ের লাহান নদীর ঘাটে বাইন্দা রাইখ্যো।
হেইয়ার পর যহন তোমার খুশি, তহন নাও ছাইড়া দিওআমিও তহন ভাসতে ভাসতে হ্যাষম্যাশসমুদ্দুরে গিয়া মিশ্যা যামু! দূরে, বহুত দূরে, তহন আমারে কেউ আর দ্যাখপো নাআমি, আমি মিশ্যা যামু, মিশ্যা যামু ... মিশ্যা যামু ...॥
৩০ জুন, ২০২১ঢাকা।
এইচআর/এএসএম