ধর্ম

ধর্মীয় প্রেরণায় রমজান পালিত হয় ফিলিপাইনে

মুসলিম বিশ্বের মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাস ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ আছে। রোজা রাখা, ইফতারের পর তারাবির নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। মুসলিম সংখ্যালঘু দেশ ফিলিপাইন। তবু বিপুলসংখ্যক মুসলিম সে দেশে বাস করে। বিশেষত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় মুসলিমদের বসবাস বেশি। ফিলিপাইনের মুসলিম সমাজ নিজস্ব সংস্কৃতি লালন করে কীভাবে রমজান পালন করেন, তা নিয়ে লিখেছেন মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে রমজানরমজানকে ফিলিপাইনের অধিবাসীরা উদযাপন করে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইসলামি ঐতিহ্যের আলোকে। ফিলিপাইনে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। তাদের ইসলামি জীবনযাত্রা ও আখলাক দেখে ফিলিপাইনের আধিবাসীরা ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়। এমনকি সেখানে ইসলাম একসময় বিজয়ী ধর্মে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে পশ্চিমা অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তারা স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের নেতৃত্বে ১৫৬৮ সালে মুসলমানদের পরাজিত করে।

ফিলিপাইনের নামকরণ১৫৭১ সালে তার নেতৃত্বে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা ফিলিপের নামেই ফিলিপাইনের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেই অন্যায়ভাবে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধ্বংসে লিপ্ত হন। যেমন—রাজধানীর নাম ছিল আমানিল্লাহ। সেটা পরিবর্তন করে রাখা হলো ম্যানিলা। অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, ধর্মীয় স্থাপনা ও সংস্কৃতিকেন্দ্র তিনি ধ্বংস করে দেন। এরপর ফিলিপাইনের মুসলমানের সংগ্রাম কখনও শেষ হয়নি। এখনও তারা তাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ফিলিপাইনের মুসলিম অধিবাসীরা তাদের ধর্মপালনে খুব একটা স্বাধীন নয়। ১৯৬৮ সাল থেকে মিন্দানাও দ্বীপে মোরো মুসলিমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে। অবশ্য সরকারের সঙ্গে তাদের এখন একটি শান্তিচুক্তি চলছে।

ধর্মীয় অনুপ্রেরণা রমজানফিলিপাইনের মুসলিমরা রমজানকে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে। রমজান তাদের মধ্যে রীতিমতো উৎসবের সৃষ্টি করে। রমজানের শুরুতেই তারা মসজিদগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রমজানে মসজিদগুলো পরিণত হয় সামাজিক মিলন কেন্দ্রে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ইবাদত ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য পরিবারের পুরুষ সদস্য ও শিশুরা মসজিদে একত্রিত হয়। রমজান মাসে প্রতিটি মসজিদে মাসব্যাপী ধর্মীয় পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। মুসলিম পুরুষরা বেশির ভাগ সময় মসজিদে ইবাদতে কাটায়। শিশুরা ধর্মীয় পাঠ গ্রহণে মনোযোগী হয়।

সমাজসেবায় আত্মনিয়োগরমজানে ফিলিপাইনের মুসলমানরা সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে। সমাজের অসহায়-দুস্থ মানুষের কল্যাণে তারা বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেমন—সামাজিকভাবেই ধনীরা দারিদ্র্যের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করে। জাকাত-ফেতরার সব টাকা মসজিদে জমা করা হয়। ইমাম সাহেবের নেতৃত্বে তা দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করা হয়।

ইফতার আয়োজনরমজান মাসে তাদের খাবারেও বৈচিত্র্য রয়েছে। তাদের ইফতারের টেবিলে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ‘কারি কারি’ নামক ভুনা গোশত। এ ছাড়া মিষ্টান্ন, শরবত ও হরেক রকম ফল থাকে ইফতার আয়োজনে। ইফতারের পর ফিলিপিন শিশুরা ভালো পোশাকাদি পরিধান করে রাস্তায় বের হয়। উৎসবে মেতে ওঠে। তাদের হাতে থাকে রঙিন লণ্ঠন। দলবেঁধে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যায়। তারাবির নামাজ আদায় করে। সেহরির সময় একদল মানুষ সবাইকে জাগিয়ে দেয়। আনন্দ, উল্লাস ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রমজান উদযাপন করে তারা।

মুনশি/এসইউ/এএসএম