খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় ৪৫ ভাগ জমির ধান মাড়াই শেষ হয়েছে। সরকার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ২৩ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও খুশি নয় কৃষকরা। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আরো দিন ১৫ আগে থেকে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করলে তারা ধানের ন্যায্য মূল্য পেত। সরকার দেরিতে ধান ক্রয় শুরু করায় এখন সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও ফরিয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লাভবান হবেন।কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ৭০ হাজার ২১০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক ধানই মোটাজাতের বিআর-২৮, হাইব্রিড, খাটো-১০ ও পারিজা জাতের। বাঁকিটা চিকন জাতের জিরাশাইল ধান। ধান চাষে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় ধানের উৎপাদন কম হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।বর্তমানে মোটা জাতের প্রতি মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৪৬০ টাকায়। আর চিকন জাতের জিরাশাইল ধান সাড়ে ৭শ’ থেকে ৭৪০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। বর্তমানে ধানের বাজার হিসেব অনুযায়ী, ধানের দাম না থাকায় প্রান্তিক কৃষকদের প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। সরকার ২৩ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও অধিকাংশ কৃষকরা সরকারি এই মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবে না। রাণীনগর উপজেলার লোহাচুড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, এই এলাকার অধিকাংশ মাঠের জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে ১৩/১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বেশির ভাগ ক্ষুদ্র কৃষক ঋণ নিয়ে জমিতে ধান চাষ করে থাকেন। এসব কৃষককে ধান মাড়াই শেষে তাদের ঋণের টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে হয়। এই কারণেই ক্ষুদ্র কৃষক ইতোমধ্যে তাদের ধান বিক্রি করে দিয়েছে। এদিকে বোরো ধান মাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে দেখা দিয়েছে শ্রমিকের সঙ্কট।কৃষক রহিম উদ্দিন জানান, চাষীরা যখন ধান বিক্রি করে দেয় তখন সরকার ধান-চাল কেনার ঘোষণা দেয়। প্রতি বছরই একই সময় এই কার্যক্রম ঘোষণা দিয়ে থাকে। এতে কৃষকদের বেশি লোকসান গুণতে হয়। আর লাভবান হতো চাতাল ব্যবসায়ীরা। তবে এই বছর কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান কেনার যে ঘোষণা দিয়েছেন এতে স্বাগত জানালেও কি প্রক্রিয়ায় ধান কেনা হবে তার বিস্তাতির জানতে পারেনি অধিকাংশই কৃষক। ঝিনা গ্রামের আজাদুল হক জানান, সরকার এই প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে ধান কেনার ঘোষণা দেয়। অন্যান্য বছরগুলোতে যে জমিতে ২৪ থেকে ২৬ মণ ধান উৎপাদন হতো এ বছর চিটা, রোগবালাই দেখা দেয়ায় গড়ে মাত্র ১৪/১৬ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। আবার অনেক কৃষকদের জমিতে রোগবালাই না দেখা দেয়ায় ২০/২২ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। সরকার ধানের দাম ভালো নির্ধারণ করলেও প্রায় ১৫/২০ দিন দেরিতে এই ঘোষণা দেন। আব্দুল কুদ্দুস জানান, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও চাতাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ধান প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি গুদামে দিতে পারবেন কিনা এবং দ্রুত টাকা পাবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকরা এখানো বুঝে উঠতে পারেনি কিভাবে ধান ক্রয় করা হবে। জেলা চাউল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, সরকার দলীয় নেতাকর্মীর সিন্ডিকেটের কারণে কৃষক সরকারি মূল্যে গুদামে ধান সরবরাহ করতে পারবে না। এজন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, ৬০ কেজি ধানে ৩৮/৩৯ কেজি চাউল উৎপাদন হয়। বর্তমান ধানের দাম অনুযায়ী চাউলের উৎপাদন খরচ হচ্ছে সাড়ে ২৫ টাকার মতো। প্রতি কেজি চাউল ৩২ টাকা নির্ধারণ করায় চাতাল মিলারদের লাভ ভালো হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দিন ১৫ আগে থেকে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার কিছু জমিতে বেশি পরিমাণ দেয়া ইউরিয়া সারের কারণে বিছিন্নভাবে কিছু জমির ধান পড়ে গেছে। আর পড়ে যাওয়া এই সব জমির ধান প্রথম দিকে ব্লাষ্ট রোগ ও ধানে চিটা দেখা দেয়। সময় মতো ওষুধ প্রয়োগে ফলনে তেমন কোনো ক্ষতির প্রভাব পড়েনি। ধানের ফলন অধিক হওয়ায় কৃষকরা সামান্য এই ক্ষতি সহজেই পূরণ করতে পারবেন। এসএস/পিআর