দেশজুড়ে

গাবখানে চর কাটার নামে চলছে অর্থ লোপাট

ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলটিতে চর কাটার নামে ২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। চ্যানেলটির চর কেটে প্রশস্ততা বৃদ্ধি করতেই এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে লুটপাট ছাড়া আর কিছুই হয়নি। চ্যানিলটি মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনার সঙ্গে নৌ রুটে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ঢাকা ড্রেজিং বিভাগ সূত্র জানায়, ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলটিতে চর কেটে প্রসস্ততা বাড়ানোর জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ২ মাস আগে এ কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার। কিন্তু চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার অনেক আগেই এ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, চ্যানেলের ভিতরে চর না কেটে স্কুবিটর দিয়ে সামান্য সামান্য মাটি পানির ভিতর থেকে উঠিয়ে চরেই রাখা হয়েছে। এতে প্রশস্ততা বৃদ্ধি না পেয়ে উঠানো মাটি জোয়ারের সময় আবার নদীর ভিতরেই নেমে যাচ্ছে। এভাবে কিছু দিন জায়গায় জায়গায় সামান্য কাজ করে চর না কেটে লোপাট হয়েছে বরাদ্দকৃত টাকা। এতে গাবখান চ্যানেলটির ভিতরে ও প্রবেশ পথে অনেক ডুবোচর থাকলেও কেটে সরিয়ে না ফেলায় এসব চর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর পল্টুনের উপর স্কুবিটর মেশিন উঠিয়ে এ কাজ করতে প্রতিদিন ২২ লিটার মবিল খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ কাজ না করেই অপারেটর ও স্টাফরা এ মবিল মেশিন থেকে বের করে বিক্রি করতো বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। গাবখান চ্যানেল দিয়ে চলাচল করা স্টিমার মাসুদ এর ২য় মাস্টার জানান, চরের জন্য বিপদ নিয়ে এ চ্যানেল দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। চ্যানেলটি ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে আসায় স্টিমার প্রবেশ করলে উল্টো দিক থেকে কোনো কার্গো জাহাজ আসলে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চর কেটে চ্যানেলটি টু ওয়ে করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে স্কুবিটর মেশিন দিয়ে মাটি উঠাতে দেখেছি। যদি ডুবো চর থেকেই যায় তাহলে এটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।                             এ কাজের সাইট সুপারভাইজার পরিচয় দেয়া রাকিব শেখ জানান, ঢাকার এসএস রহমান গ্রুপ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই কাজ করাচ্ছে। এখানে কাজ দেখার জন্য কেউই থাকেনা। বিআইডব্লিউটিএ’র কোনো লোকও আসেনা। মাঝে মধ্যে এসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসে আমাকে যেভাবে বলে যায় আমি সেভাবেই কাজ করছি। হিসাব না করে কত দিন কাজ ও কত ফিট মাটি কাটা হয়েছে তা বলতে পারব না। মেশিন থেকে মবিল নামাতে দেখে স্টাফদের কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, পুরোন মবিল নদীতে ফেলে নতুন মবিল ঢুকাতে হবে। তখন ফেলে দেয়ার কথা বললে তারা জানায় স্যার এটা বিক্রি করে আমরা কিছু টাকা পাই। এ কাজ সম্পর্কে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌসংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এই মূহুর্তে গাবখান চ্যানেল ড্রেজিং করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। তাছাড়া ড্রেজিং করার আগে সার্ভে করে চিঠির মাধ্যমে জানালে ড্রেজিং বা চর কাটার উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ`র মাধ্যমে বর্তমানে চর কাটার কাজ চলছে এরকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তার মতে এ মূহুর্তে চ্যানেলটি চলাচলের উপযোগী থকায় ড্রেজিং বা চরকাটার প্রয়োজন নেই। গত এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে চ্যানেলটিতে স্কুবিটর দিয়ে কিছু কিছু স্থানে মাটি উঠাতে দেখা গেলেও ঠিকাদার বলেছেন অনেক আগেই আমার কাজ শেষ হয়েছে। তবে চ্যানেল ড্রেজিং বা চর কাটার কাজ নয়। কোথাও চরের কারণে জাহাজ চলাচল আটকে গেলে সেখানের মাটি কেটে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বিআইডব্লিটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিউল্লাহ জানালেন চরের মাটি কাটার এ কাজ মে মাসের মাঝামাঝি সময় শেষ হবে। কিন্তু ঠিকাদার এপ্রিলের ১৫ তারিখের আগেই কাজ শেষ করেছেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। এ কাজ চলবে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।     এফএ/এমএস