শীত শীত ভাব, তবে শীত এখনও আসেনি। এরকম একটা সময়ে হুট করে ট্রেনে উঠে চলে আসলাম নেত্রকোনায়। শুনেছি নেত্রকোনা পাহাড়, ঝরনা, খাল ও হাওরের জন্য বিখ্যাত। তাই ভাবলাম নিজ চোখে দেখে আসি সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানটি।
কমলাপুর থেকে নেত্রকোনা স্টেশনে পৌঁছালাম রাতে। কেন্দুয়া উপজেলার তৎকালীন ইউএনও কাবেরী জালাল আপু আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন সার্কিট হাউজ। তাই স্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসলাম সার্কিট হাউজে।
পরেরদিন সকালে বের হলাম নেত্রকোনার মূল আকর্ষণ চিনা মাটির পাহাড় দেখার জন্য। নেত্রকোনা শহর থেকে স্থানটি বেশ খানিকটা দূরে। জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের আড়াপারা গ্রামে গেলে চিনামাটির পাহাড় দেখা যাবে।
তবে যাওয়ার সহজ বাহন হিসেবে আছে মোটরসাইকেল। ৩০০ টাকায় একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চললাম। যাওয়ার পথে দেখলাম অপূর্ব সুন্দর এক নদী। মোটরসাইকেল চালক জানালেন মোটরসাইকেল সমেত ইঞ্জিলচালিত নৌকায় তুলে ও পার যেতে হবে। আমার কাছে ব্যাপারটা দারুণ মনে হলো। কেননা নদী আমার বরাবরই ভীষণ প্রিয়।
নৌকায় উঠে জিজ্ঞেস করলাম, নদীর নাম কী? মাঝি জানালেন নদীর নাম সোমেশ্বরী। আমার লাইফে কখনো আমি এতো অনিন্দ্য সুন্দর নদীর নাম শুনিনি। নদীর শান্ত শীতল পানির মাঝে চলতে লাগলো নৌকা। এরপর নৌকা থেকে নেমে আবারও মোটরসাইকেলে।
আরও পড়ুন
চন্দ্রনাথ পাহাড়-গুলিয়াখালী সি বিচ, ঘুরে আসুন একদিনেইপর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাওয়াছড়া লেকএকটু পরেই দেখতে পেলাম চিনা মাটির পাহাড়। ততক্ষণে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে এটি চিনামাটির পাহাড়, সাদা মাটির পাহাড় নামেই পরিচিত। তবে এটি নেত্রকোনার খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি জায়গা। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ স্থানটি বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যেও অন্যতম।
নাম চিনামাটি বা সাদা মাটির পাহাড় হলেও পাহাড়ের একেক অংশে মাটির রং একেক রকম। কোথাও লাল, কোথাও সাদা আবার কোথাও নীলাভ। এ যেন নানা রঙের খেলা। পাহাড়ের নিচে আছে নীল ও সবুজ পানির লেক। পাহাড়ের ছায়া ও আকাশের রঙের ওপর ভিত্তি করে পানির রং পরিবর্তন হয়।
একপাশ দিয়ে উঠে গেলাম পাহাড়ের উপর। খুব বেশি উঁচু না, তবে ওঠা কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। পাহাড়ে এসেছি কিছুটা ঝুঁকি তো নিতেই হবে। পাহাড়ে উঠে একটা প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিয়ে চারদিকে তাকাতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ।
এ পাহাড়ের উপর থেকে দূরেও দেখা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেলটা আরও বয়স্ক হতে থাকলো। আমিও পাহাড়ের এদিক সেদিক দেখতে লাগলাম। খুব ছোট পাহাড় হলেও দীর্ঘ একটা সময় কাটালাম এর ওপর।
বিকেল যখন ঢলে পড়তে লাগলো সন্ধ্যার গায়ে, তখনই আরও স্পষ্ট করে উঁকি দিলো মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়। দেখে মনে হলো না, এখানে বেশি সময়টা দেওয়া বৃথা যায়নি। এক ঢিলে দুই পাখি মারা গেলো।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই দারুণ এক মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে রওনা দিলাম। কেননা আমাদের আজকেই আবার যেতে হবে ব্রিটিশ বিরোধী ও টংক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহের একমাত্র সংগ্রামী মুখপাত্র কমরেড কুমুদিনী হাজং এর বাড়িতে। দেখা করতে হবে তার সঙ্গে।
জেএমএস/জেআইএম