বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্থ ও সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর সরকার। এ লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে নানান ধরনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
Advertisement
ফলে চলতি বছরের মধ্যেই ৮/১০টি দেশে পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন, পাচার হাওয়া টাকা জনগণের। যেকোনো মূল্যে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কোন উপায়ে, কত টাকা কোন দেশে কবে পাচার হয়েছে তা খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেন। সর্বশেষ ১০ মার্চ তার (প্রধান উপদেষ্টার) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। ঈদের পরে তিনি আবার বৈঠক ডেকে অগ্রগতি জানবেন বলে জানান।
সরকার পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ফেব্রুয়ারিতে সরকারের নিযুক্ত কনসালটেন্ট মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি এসইসি'র সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। শুধু তাই নয়, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তারা গভীর পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। বাংলাদেশের সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে সহায়তা করতে চান। টাকা উদ্ধারের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে খুব দ্রুত তাদের (মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা) একটি চিঠি পাঠানো হবে।
Advertisement
শফিকুল আলম বলেন, আমরা চাচ্ছি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন এজেন্সির সহযোগিতা নিয়ে পাচারকৃত অর্থ তারা কীভাবে, কত টাকা পাঠিয়েছে তা জেনে উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
প্রেস সচিব জানান, সিঙ্গাপুরের নন-রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে আগামী মাসে (এপ্রিলে) সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন এজেন্সি ও সংস্থার সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি জানান,বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আগামী ১৭ মার্চ ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে)-এ অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অব করাপশনের সঙ্গে (নিড ফর ইউকে টু সাপোর্ট বাংলাদেশ অন অ্যাসেট রিকভারি) কথা বলবেন। যে অর্থ পাচার হয়েছে বা সম্পদ চিহ্নিত করা হচ্ছে সেগুলো যাতে তারা ফ্রিজ করেন।
এছাড়া আগামী ১৯ মার্চ লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল ল' ফার্মগুলোর সঙ্গে কনফারেন্স হবে। এ পর্যন্ত ২০০ টি ল' ফার্ম আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া তাদের ফরেন অফিস, ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির মহাপরিচালক এবং ইউকের সাবেক ও বর্তমান একাধিক বিচারপতি সচিবের সঙ্গে কথা হবে বলে জানান তিনি।
Advertisement
শফিকুল আলম আরও জানান, এছাড়াও এপ্রিল মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য (টু প্রিপেয়ার ফর বাংলাদেশ অ্যাসেট রিকভারি কনফারেন্স ইন লন্ডন ইন আরলি মে) কনফারেন্স আয়োজনের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে যে ৮/১০টি দেশে অর্থ পাচার হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে। কনফারেন্সে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে গঠিত ১১ সদস্যের টাস্ক ফোর্স সদস্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেক হোল্ডাররা অংশগ্রহণ করবেন।
এমইউ/এমএইচআর/জেআইএম