দেশজুড়ে

চার বছর পর ওটিতেই মিললো গায়েব হওয়া চিকিৎসা যন্ত্র

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র খোয়া যাওয়ার চার বছর পর উদ্ধার হয়েছে। তবে এতদিন কোথায় ছিল জানে না কেউ।

তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, গায়েব হওয়া যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে এটাই বড় কথা। কোথায় ছিল, কার কাছে ছিল সেটা জেনে লাভ কী?

জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের জন্য ১০টি বাইপোলার ডায়াথার্মি যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। যন্ত্রটি অপারেশন থিয়েটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিজারসহ যেকোনো রোগীর অস্ত্রোপচারের পর এই যন্ত্র দিয়ে ছ্যাঁকা দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) সংশ্লিষ্ট যন্ত্র সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সানি ট্রেডিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড একটি যন্ত্র স্থাপন করে। বাকি ৯টি যন্ত্র স্টোররুমে রেখে হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আরশেদ উল্লাহ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী এ কে এম রাসেল ও অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তারের স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।

কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা অনলাইন এন্ট্রির জন্য পরিদর্শনকালে অপারেশন থিয়েটার ও স্টোর রুমে সেই যন্ত্রগুলো পাওয়া যায়নি। তখন ১ ফেব্রুয়ারি অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তারকে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. বাহাউদ্দিন। জান্নাত আরা ৪ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন।

পরে ৬ ফেব্রুয়ারি সেই সময়ের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সরোয়ারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত, সুপারিশসহ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি বাইপোলার ডায়াথার্মি মেশিনের মধ্যে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে পাঁচটি মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি মেশিন এখনো বাক্স থেকে বের করা হয়নি। দুটি মেশিন দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর ৫টি মেশিন রয়েছে স্টোররুমে নতুন অবস্থায়।

তবে মেশিনের বাক্স থেকে মেশিন বের করলে দেখা যায়, মেশিনের সিরিয়াল নম্বরের সঙ্গে বাক্সের সিরিয়াল নম্বরের কোনো মিল নেই।

তৎকালীন অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তার বলেন, তখন অপারেশন থিয়েটারে ১০টি মেশিন ইন্সটল করা হয়নি। একটি মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে ইন্সটল করা হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালে মেশিন না পেয়ে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছিল। আমি সেখানেও লিখেছিলাম আমাকে একটা মেশিন দেওয়া হয়েছে। তখন যে ইঞ্জিনিয়ার এখানে কাজ করতে এসেছিলেন তিনিও বলেছেন অপারেশন থিয়েটারে একটি মেশিন ইন্সটল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি একটি কলমও অপারেশন থিয়েটারে আনতে হয়, আমাদের ইন্ডেন খাতায় চাহিদা দিয়ে আনতে হয়। প্রথমে লুৎফর সাহেব আমাকে একটা মেশিন দিয়েছিলেন। পরে আবার ২০২৪ সালে যখন মেশিন প্রয়োজন হয় তখন আমি লুৎফর সাহেবের কাছে ইন্ডেন খাতায় আরও ৪টি মেশিন আনতে গেলে বুঝতে পারি মেশিন চুরির অপবাদ আমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন লুৎফর সাহেবের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরে সবার সামনে লুৎফর সাহেব আমার কাছে ক্ষমা চান।

স্টোর কিপার লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সানি ট্রেডিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের বরাতে জানা যায়, তিনি ওই দিন মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে বাইপোলার ডায়াথার্মি মেশিন সংযোজন করতে এসে ৯টি মেশিন স্টোর রুমে ও ১টি মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে অপারেশন থিয়েটারে ইন্সটল করেছিলেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সরোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই সময় কী বলেছিলাম আমার মনে নেই। তবে একজন ফার্মাসিস্টকে স্টোরকিপারের দায়িত্ব দিলে এমনটা হবেই।

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) শেখ মোহাম্মদ জিয়াউর হক বলেন, আমরা তখন অপারেশন থিয়েটারে ও স্টোর রুমে কোনো মেশিন পাইনি। আর আমিতো সারাক্ষণ অপারেশন থিয়েটারে থাকি। তখন এখানে ১০টি মেশিন ইন্সটল করা হয়নি। একটি মেশিন ইন্সটল করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, গায়েব হওয়া যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে এটাই বড় কথা! কোথায় ছিল? কার কাছে ছিল সেটা জেনে লাভ কী হবে?

এফএ/জিকেএস