কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দিয়ে ঈদযাত্রায় প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ বাড়ি ফেরে। তবে এবার ঈদযাত্রার আগে মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনার পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। ফলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মহাসড়কে নেমে আসছে আতঙ্ক। এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের মধ্যে এখন ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পুলিশ বলছে মহাসড়কে টহল কার্যক্রমসহ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে মহাসড়কে আল ইমরান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে লুটপাট করে। ঘটে শ্লীলতাহানির ঘটনাও। এ ঘটনার পর থেকে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে আরও আতঙ্ক বেড়ে যায়।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ২৬টি জেলার ৩০-৩৫ হাজার পরিবহন আসা-যাওয়া করে। অপরদিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়েও প্রতিদিন শত শত যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে। এই মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর সীমানা গাজীপুরের কালিয়াকৈর, ময়মনসিংহের রসুলপুর ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাস মালিকরা বলেন, মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত এবং মির্জাপুরের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইল শহরের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ডাকাতি হচ্ছে। ফলে দুটি স্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
যাত্রীরা বলেন, কয়দিন পর পর মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এতে করে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রাতে মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে এক প্রকার আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
মহাসড়কের এলেঙ্গায় কথা হয় বাসযাত্রী নাহিদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এখন মানুষের নিরাপত্তা খুবই কম। রাতে ও দিনে সড়ক মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে। প্রশাসন যদি মহাসড়কে আরও জোরালোভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে আমরা ঈদে ভালোভাবে বাড়িতে যেতে পারবো।
যাত্রী সাফায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে আতঙ্ক থাকবেই। সরকারের কাছে আশা করছি, নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উত্তরবঙ্গগামী বাসের চালক মোহাম্মদ সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সতর্কভাবে গাড়ি চালাই। ডাকাত সদস্যরা যাত্রী বেশে বাসে ওঠে। কে ডাকাত ও সাধারণ যাত্রী তা বোঝা যায় না। মহাসড়ক ফাঁকা পেলেই ডাকাতি শুরু করা হয়। সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কে রয়েছি।
জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শফিকুর রহমান শফিক জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে দুটি জায়গায় ডাকাতি হচ্ছে। ডাকাতদের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হলে ডাকাতি রোধ করা সম্ভব। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাতি প্রতিরোধে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার আগে প্রতিটি বাসেই সবার ছবি তুলে রাখার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ওই ভিডিও বা ছবিগুলো ডাকাত ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় ফেরত আসার সময় বাসে অনেক ক্ষেত্রে যাত্রী কম থাকে। এসব কম যাত্রীবাহী গাড়িতে নারী যাত্রী রয়েছে কি না তা চেক করতে হবে।
গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগের তুলনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাতে যেসব এলাকায় আলো কম রয়েছে সেসব স্থানে টহল জোরদার করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এরইমধ্যে মহাসড়কে পুলিশের টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে যাতে যাত্রীরা নিরাপত্তায় বাড়িতে যেতে পারে, সে বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি।
এফএ/জিকেএস