খেলাধুলা

মহোৎসব ও মহাশোকের আইপিএল ফাইনাল

মহোৎসব ও মহাশোকের আইপিএল ফাইনাল

আইপিএলের ১৮তম আসরের ফাইনাল আজ মঙ্গলবার। শিরোপা জেতার লড়াইয়ে আজ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) মুখোমুখি হবে পাঞ্জাব কিংস। এর আগে ১৭টি আসর শেষ হলেও এবারের ফাইনালিস্টদের কারোই শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। যদিও একেবারে উদ্বোধনী আসর থেকে এখন পর্যন্ত সবগুলো আসরেই খেলেছে বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব।

Advertisement

আইপিএলে এখন পর্যন্ত সাতটি দল তাদের নাম খোদাই করিয়েছে সোনালী ট্রফিতে। এর মধ্যে একটি দলের অস্তিত্বেই (২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন ডেকান চার্জারস) নেই। দুইটি দল (গুজরাট টাইটান্স ও লখনৌ সুপার জায়ান্টস) আবার টুর্নামেন্টের শুরুতে ছিলই না।

বেঙ্গালুরু এবং পাঞ্জাব এ নিয়ে চতুর্থবারের ফাইনালে উঠেছে। এর আগে তিনবারই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

আরেকটি ‘ট্রফি-বিহীন’ পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হলো দিল্লি ক্যাপিটালস। সামাজিক মাধ্যমে এই তিন দলকে ঠাট্টা করে কেউ কেউ বলেন, ‘আইপিএলের পবিত্র ত্রয়ী’। নামের ভেতরে কৌতুক থাকলেও সময়ের সঙ্গে তাদের মাঝে একধরনের নরম আত্মীয়তার অনুভব এসেছে। এই তিন দলের ভক্তরাও মজা করে নিজেরাই ব্যবহার করেন নামটা। সেটি যন্ত্রণার ভ্রাতৃত্ববোধে একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে।

Advertisement

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আর ত্রয়ী থাকবে না। এবার যেহেতু বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব- দু’দলই ফাইনালে, তাই আইপিএলে নতুন ইতিহাস নিশ্চিতভাবেই লেখা হবে। ভেঙে যাবে ত্রয়ী।

আহমেদাবাদের নরেদ্র মোদি স্টেডিয়ামে আইপিএলের সিংহাসনে বসবে নতুন রাজা। রাজ্য জয়ের পর রাজা যেভাবে গ্রান্ড সেলিব্রেশন বা মহোৎসব করেন, সেটিই আজ চিত্রায়িত হবে আহমেদাবাদে।

তবে উৎসব তো করতে পারবে একটি দল, যারা চ্যাম্পিয়ন হবে। দু’দলের তো আর একসঙ্গে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে যে দল হারবে, তারা কী করবে?

পরাজিত দল করবে মহাশোক। বহুল কাঙ্ক্ষিত ট্রফির একেবারে কাছাকাছি এসেও হারিয়ে ফেলার শোকে মূহ্যমান হয়ে যাবে তারা।

Advertisement

আইপিএলের শুরু থেকেই বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলছেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় দলের সুপারস্টার এখনও আইপিএল শিরোপা জিততে পারেননি, তা মেনে নেয়াও কষ্টের। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় তার সামনে আরও একটি সুযোগ এসেছে। এবার ভাগ্য কি কোহলির সহায় হবে? নিয়তি কি সত্যিই ঠিক করেছে, পিঠে ১৮ নম্বর জার্সি পরা মানুষটিকে ১৮তম মৌসুমে এসে একটি ট্রফি দেবে?

কোহলির ভাগ্যে কী লেখা আছে, সেটি জানা যাবে রাতে। ৮ টায় খেলা শুরু হওয়ার পর এক এক করে ইঙ্গিত আসতে থাকবে।

কিন্তু কোহলিরা হেরে গেলে? সেটি হবে বেঙ্গালুরু ভক্তদের জন্য চতুর্থ ফাইনালে চতুর্থ পরাজয়, নতুন আশার পথের সমাপ্তি। যে দলে ব্যাট-বল, টপঅর্ডারের ঝলক আর মিডলঅর্ডারের গভীরতার মাঝে এক অনবদ্য ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, শেষটা আবার সেই পুরনো পরিণতিতে গিয়ে ঠেকবে।

সবচেয়ে বড় কথা, এটা হবে কোহলির জন্য আরও এক তিক্ত পরাজয়। যিনি এবারও অবিশ্বাস্য মৌসুম কাটিয়েছেন, ৫০০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করেছেন রেকর্ড অষ্টমবারের মতো। তার জন্য এক ব্যতিক্রমী ১২ মাসের চূড়ান্ত অধ্যায়, যেখানে একদিকে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের আনন্দ, অন্যদিকে রয়েছে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার মিশ্র অনুভূতি। অন্যদিকে পাঞ্জাব হেরে গেলে সেটি হবে প্রতিশ্রুতির ভেঙে পড়া। এমন এক হৃদয়বিদারক গল্প তৈরি হবে, যা দুর্দান্ত কোনো ক্রীড়াভিত্তিক সিনেমার চিত্রনাট্য হতে পারতো।

পাঞ্জাব কোচ নিজের পথ ছেড়ে এমন এক অধিনায়ককে দলে এনেছিলেন, যার প্রমাণ করার মতো কিছু ছিল। যে অধিনায়ক গেল মৌসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (কেকেআর) চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, সেই শ্রেয়াস আইয়ার এবার হয়ে এসেছেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক।

কোচ-অধিনায়ক যুগল মিলে পাঞ্জাবে তৈরি করেছিলেন এমন এক পরিবেশ; যেখানে অজানা, অভিজ্ঞতাহীন দেশি খেলোয়াড়রাই পরিণত হয়েছিল দলের মহাতারকায়। যে কারণে এমন এক দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা জেগেছে, যে দলটা ইতিহাসে শুধু ব্যর্থতারই সাক্ষী হয়েই এসেছিল এতদিন।

শেষ পর্যন্ত দেখা যাক, ভাগ্য কোন দলের সহায় হয়, আর কারা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আরও বহুদিন কাটায়।

এমএইচ/