কলকাতার এক টুকরো বাংলাদেশ নামে পরিচিত ‘নিউমার্কেট’। কলকাতায় কোনো বাংলাদেশি অতিথি আসলেই তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরের মারকুইস স্ট্রিট থেকে শুরু করে কিডস্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, ক্লিন লেন, টটি লেন এলাকার ছোট-বড় হোটেলগুলো।
Advertisement
তবে থাকার হোটেল যাই হোক না কেন সব বাংলাদেশি পর্যটকের পছন্দের রেস্তোরাঁ হলো ‘আব্দুল খালেক’ রেস্তোরাঁ।একটা সময় ছিল যখন এই রেস্তোরাঁর একবাটি কালা ভুনা খেতে হলে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।
কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার খালেক রেস্তোরাঁ বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা মূলত তাদের বাঙালি খাবারের জন্য। বিশেষ করে তাদের কালা ভুনা এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল। বর্তমানে ছয় পিস গরুর মাংসের একবাটি কালা ভুনা দাম মাত্র ৫০ রুপি। যার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়।
বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় চিকিৎসা করাতে অথবা ঘুরতে এলেই তাদের এই পছন্দের রেস্তোরাঁয় বসে বাঙালি খাবার উপভোগ করতেন।
Advertisement
তবে বর্তমানে বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার নিউমার্কেটের এই রেস্তোরাঁ প্রায় বন্ধের মুখে। তাদের ব্যবসা প্রায় ৯৯ শতাংশ কমে গেছে। মাত্র এক শতাংশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাও আবার স্থানীয় লোক এবং যারা চিকিৎসার জন্য ওপার বাংলা থেকে কলকাতায় আসছেন তাদের ওপর। এই সংখ্যাটাও একদমই কম।
এই রেস্তোরাঁর মালিক মুহাম্মদ নাসীম বলেন, আমাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এই নিউমার্কেট চত্বরটি বাংলাদেশি পর্যটক নির্ভর। বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আমাদের ব্যবসায় ভাটা নেমেছে। এখন যা পর্যটক আসছে তার সংখ্যায় একদম কম, শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় আসছে।
মুহাম্মদ নাসীম আরও বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে আমাদের ব্যবসা ৯৯ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। আগে আমার এখানে বাংলাদেশি পর্যটকদের কালা ভুনা খেতে হলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। আর এখন একদমই ফাঁকা রয়েছে। আমার বাবার নাম খালেক তার নামেই এই রেস্তোরাঁ। বাবা এখন সেভাবে রেস্তোরাঁয় বসেন না। আমিই চালাই।
মুহাম্মদ নাসীমের আশা হয়তো সামনের বছর ভিসা জটিলতা ঠিক হয়ে যাবে এবং আবারও নিউমার্কেট চত্বর বাংলাদেশি পর্যটকে গমগম করবে।
Advertisement
কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসেছেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ফারুক হোসেন। ‘খালেক রেস্তোরাঁয়’ খেতে এসে তিনি বলেন, আমি এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছি। এসে দেখছি এখানে একদমই বাংলাদেশি পর্যটক নেই। যারা আছে সবাই চিকিৎসার জন্যই এসেছে।
২৭ দিন ধরে আমি কলকাতায় আছি। আর কলকাতায় এলেই আমাদের খাওয়া-দাওয়ার পছন্দের জায়গা এই রেস্তোরাঁ। এখানে গরুর কালা ভুনাটা অসাধারণ তার সঙ্গে মাছ, সবজি সবকিছুই পাওয়া যায়। এদের রান্নার কোয়ালিটি খুবই ভালো এবং দামও নাগালের মধ্যে।
তিনি বলেন, এই খালেক রেস্তোরাঁ ছিল আমাদের একটা মিলন মেলা। খালেকে খেতে আসলেই পরিচিত বাংলাদেশি মানুষ পাওয়া যেত। এখন প্রায় ফাঁকা।
বর্তমানে কলকাতা নিউ মার্কেট চত্বরে বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বেশ কিছু খাবারের হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। নিউমার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায় অন্যান্য রেস্তোরাঁও বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তারাও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।
ডিডি/টিটিএন